বিমান বাংলাদেশ: আকাশে আস্থাহীনতার এক দশক


গত দশ বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রমে দুর্ঘটনা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও জরুরি অবতরণের খবর প্রায় নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্সের ইতিহাসে গৌরব যেমন রয়েছে, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ঘটে যাওয়া অঘটন প্রশ্ন তুলছে এর নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
সর্বশেষ উদাহরণ, ১১ আগস্ট ২০২৫ বিজি ৬১৫ ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করলেও মাত্র ২১ মিনিটের মধ্যে কেবিনের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। এর আগের দিন ১০ আগস্ট রোম থেকে ঢাকাগামী বিজি ৩৫৬ ফ্লাইট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাতিল হয় এবং উড়োজাহাজটি এখনও গ্রাউন্ডেড অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে একাধিকবার টেকনিক্যাল সমস্যা ও ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে বিমান মাঝপথে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা, ২০২০ সালে সিলেট-ঢাকা রুটে ইঞ্জিন বিকল, ২০২২ সালে লন্ডনগামী ফ্লাইটের ইঞ্জিনে ত্রুটি, এসব ঘটনা যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিলম্ব, গ্রাউন্ডেড অবস্থা এবং বাতিলের শিকার হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের বহরে পুরনো উড়োজাহাজ, পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, দক্ষ প্রকৌশলীর সংকট, এবং ব্যবস্থাপনা দুর্বলতা এসব ঘটনার মূল কারণ। শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, সময়মতো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন ও সঠিক মান নিয়ন্ত্রণেও ঘাটতি রয়েছে। এর সঙ্গে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং জবাবদিহিতার অভাব।
এক দশক ধরে এই ধারাবাহিক সমস্যা বিমানের ব্র্যান্ড ইমেজকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আন্তর্জাতিক যাত্রীদের আস্থা কমছে, অভ্যন্তরীণ যাত্রীরাও বিকল্প এয়ারলাইন্সের দিকে ঝুঁকছেন। বিমান নিরাপত্তা মানদণ্ডে অবনতি হলে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও অপারেশনাল সীমাবদ্ধতার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
এখনই সময়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে জরুরি ভিত্তিতে বহরের আধুনিকায়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ, প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং কঠোর নিরাপত্তা অডিট বাস্তবায়নের। জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন তদন্ত ও ফলাফল প্রকাশ জরুরি।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স কেবল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি দেশের ভাবমূর্তির প্রতীক। তাই আকাশে আস্থাহীনতার এই ধারাবাহিকতা থামাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
