বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক প্রাণের তিন কর্মীর কারাদণ্ড, কোম্পানির দাবি ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ ভয় নয়, সচেতন করতেই এমন বিজ্ঞপ্তি: এনবিআর চেয়ারম্যান শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামানোর চেষ্টা চলছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর, নিম্নাঞ্চল প্লাবনের আশঙ্কা অবৈধ অভিবাসনের মরীচিকা ও বেদনাদায়ক বাস্তবতা উড়োজাহাজ সংকটে দুবাই ও কুয়েত ফ্লাইট বাতিল করল বাংলাদেশ বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই জাহাজ কেনার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চল ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ইউক্রেন!
  • তিন কিলোমিটার রাস্তায় কাদা ও জলাবদ্ধতা; উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ব্যর্থ প্রতিচ্ছবি

    তিন কিলোমিটার রাস্তায় কাদা ও জলাবদ্ধতা; উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ব্যর্থ প্রতিচ্ছবি
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ১নং গয়েশপুর ইউনিয়নের চাকদাহ গ্রামের জোড়া ব্রিজ থেকে ইছাপুর পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা বছরের পর বছর ধরে গ্রামীণ জীবনে ভোগান্তির নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে। খানাখন্দে ভরা, কাদা ও জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা এই সড়ক যেন উন্নয়ন পরিকল্পনার ফাঁকফোকর আর অবহেলার এক প্রকট প্রমাণ।

    সরেজমিনের চিত্র ভয়াবহ। বর্ষা মৌসুমে পুরো রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত, কাদার স্তূপ এবং পানি জমে যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে যায়। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই রাস্তায় চলাচল করলেও তাদের পাড়ি দিতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে। অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ভ্যানচালকদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে একপ্রকার ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ; মোটর বারবার নষ্ট হয়, দুর্ঘটনার আশঙ্কা লেগেই থাকে।

    এ অবস্থার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী কৃষক সমাজ। ফসল বাজারে নিতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়, ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং বিক্রয়মূল্যের সিংহভাগ পরিবহন ব্যয়ে হারিয়ে যায়। একদিকে লাভজনক কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাব শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতেই নয়, সামাজিক কাঠামোতেও পড়ছে।

    যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ভাঙন শিশুদের শিক্ষার অধিকারকেও ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বর্ষাকালে স্কুলে পৌঁছানো একটি দুঃসাহসিক অভিযান হয়ে দাঁড়ায়। অসুস্থ রোগীকে দ্রুত চিকিৎসালয়ে পৌঁছানোও হয়ে ওঠে দুরূহ। অর্থাৎ, অবকাঠামোগত এই ব্যর্থতা জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনীতিকে একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

    স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা দ্রুত পরিদর্শন ও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, শুধুমাত্র মৌখিক আশ্বাসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় না। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ, যেখানে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং টেকসই পাকা রাস্তার নিশ্চয়তা থাকবে।

    গ্রামীণ সড়ককে শুধু পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে দেখা যাবে না; এটি কৃষি উৎপাদন, পণ্য সরবরাহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড। তাই এই তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কারকে বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি জাতীয় অগ্রাধিকারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

    যদি আমরা সত্যিই “গ্রাম হবে শহর” এই স্লোগান বাস্তবায়ন করতে চাই, তবে এমন অবহেলিত সড়কগুলোর দিকে অবিলম্বে নজর দিতে হবে। উন্নয়নের আলো যেন কাদা ও জলাবদ্ধতার আঁধারে হারিয়ে না যায়। এখন সময় দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দেওয়ার, কথার ফুলঝুরি নয়, কর্মের বাস্তব রূপ দেখানোর।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ

    আরও পড়ুন