দেশের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন, দায়সারা নয়


দেশে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি গণজোরালো হওয়ার মধ্যেও কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় সাধারণ মানুষ হতাশ। সাম্প্রতিক সময়ের একটি উদাহরণ হলো কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ এবং তার স্ত্রী সাদিয়া সাবার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও, গোপন সূত্রে জানা যাচ্ছে আজাদ ইতোমধ্যেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এই তথ্য সন্দেহ জাগায় যে, দুর্নীতি দমন সংস্থা—দুদক তাদের দায়িত্ব কতটুকু যথাযথভাবে পালন করছে।
দুদক নিজেই আদালতে আবেদন করেছে যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং দীর্ঘায়িত হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠে, এত স্পষ্ট সতর্কতার পরও কেনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেশের বাইরে যাওয়ায় রুখতে পারেনি দুদক? এই পরিস্থিতি দুদকের কার্যক্রমে অবহেলা কিংবা কার্যকর পদক্ষেপে গাফিলতির কথা তুলে ধরে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রতি আস্থা কমে যায় এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হয়।
অবৈধ সম্পদের সন্ধান ও তাদের প্রকৃত মালিকানার অনুসন্ধান যথাযথ হলে দুর্নীতিবাজদের ওপর কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী তৎপরতা, স্বচ্ছতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগ। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে এই দায়িত্ব নিতে হবে যে, রাজনৈতিক সীমানা পেরিয়ে সকল দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত ও বিচার হবে।
জনগণের সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতি রোধে এখনই প্রয়োজন সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা এবং ত্রুটিমুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা। দুর্নীতিবাজদের ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ থেকে বের করে এনে আইনের আওতায় আনা না হলে দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
দুদক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান, তারা যেন পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অবিলম্বে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় অনুসন্ধান সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আলাদা বিধি-নিষেধ থাকবে না, এটি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, যারা গোপনে দেশে বাইরে পালিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে দুদক হবে নির্ভরযোগ্য, সাহসী এবং কার্যকর সংস্থা। তবেই হবে ‘সততার’ সঙ্গী, ‘ন্যায়বিচারের’ পথে দৃঢ় অগ্রগামী এবং ‘জুলাইয়ের চেতনা’ বাস্তবায়নের অটুট বাহক।
