পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের কড়া বার্তা


বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ বহুদিন ধরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংকট হিসেবে চিহ্নিত। শিল্পায়ন, নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে পলিথিন ব্যবহার, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ ও জল দূষণ। এই প্রেক্ষাপটে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক দেশব্যাপী অভিযান নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত ও সাহসী উদ্যোগ।
নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৪ হাজার ৫৬০ কেজি পলিথিন জব্দ নিছক পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি শক্তিশালী বার্তা যে, পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ড আর সহ্য করা হবে না। একই সঙ্গে শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে হাইড্রোলিক হর্ণ জব্দ ও জরিমানা, অবৈধ কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এই অভিযানের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
২০২৫ সালের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে ২৫ কোটিরও বেশি জরিমানা, শত শত ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ এবং বিপুল পরিমাণ দূষণকারী যন্ত্রপাতি জব্দ প্রমাণ করে, রাষ্ট্রযন্ত্র এখন আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল। তবে শুধু অভিযান চালালেই সমস্যার সমাধান হবে না, দূষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন।
প্রথমত, পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও এখনও তা বাজারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত না করে কেবল আইন প্রয়োগে টেকসই পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। চালক ও মালিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করা দরকার। তৃতীয়ত, ইটভাটাসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার দূষণ কমাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।
পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এই অভিযানের মাধ্যমে সরকার জনগণের প্রতি যে দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে অভিযান যেন কেবল ‘আচমকা অভিযান’ বা ‘ক্যামেরার সামনে প্রদর্শন’ হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করাও জরুরি। প্রয়োজন একটি ধারাবাহিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অংশগ্রহণমূলক কৌশল, যেখানে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবে।
পরিবেশ রক্ষা কেবল রাষ্ট্র বা প্রশাসনের একক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। সরকার অভিযান চালিয়েছে, এবার জনগণের উচিত, পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা। তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ রেখে যেতে পারবো।
