শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • রোববার সীমিত পরিসরে খুলছে মাইলস্টোন কলেজ ট্রাম্পের বক্তব্যে হতবাক ভারত, 'প্রকৃত বন্ধুত্বে' চিড়: নিউইয়র্ক টাইমস মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপে জনকণ্ঠে আবারও আলোচনায় ‘র’ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জনকণ্ঠের সব কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ২০৯ ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং করণীয়: দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, চাই সমন্বিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ‘সুমাইয়া জাফরিন’ নামে কোনো নারী এএসপি নেই: পুলিশ সদর দপ্তর মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা চলছে: মেজর হাফিজ কক্সবাজারে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল অটোরিকশাচালকসহ ৪ জনের জেল সুপারের 'গোপন সাম্রাজ্য': ৫ কোটি টাকার ভবন!
  • বাবার কান্নায় মেয়ের আবেগঘন বার্তা

    সিলেটে দুর্বৃত্তদের হামলায় দুই খাসিয়া পরিবারের জুমবাগানে ব্যাপক ক্ষতি

    সিলেটে দুর্বৃত্তদের হামলায় দুই খাসিয়া পরিবারের জুমবাগানে ব্যাপক ক্ষতি
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুর পুঞ্জিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় বিনষ্ট হয়েছে দুটি খাসিয়া পরিবারের লালিত স্বপ্ন, পানসুপারি  জুমবাগান। রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হয়েছে লতানো দুই হাজারের বেশি পান গাছ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লামাপুঞ্জির হেডম্যান রিসন কংওয়াং ও গস্মিন ডিখার পরিবার।

    দুটি খাসিয়া  পরিবার খালি শূন্যতায় কীভাবে টিকে থাকবে? ছেলে, মেয়েদের, বই-খাতা, বাজার, বিদ্যুৎ, ওষুধ—সবই এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবার দুটির মাঝে।  একজন কৃষকের গাছ মানেই শুধু পাতা বা ফল নয়, সেটাই তার স্বপ্ন, জীবিকা, তার ভবিষ্যৎ, তার জীবন। সেই স্বপ্নটা রাতারাতি কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে অসহায় হয়ে পরেছেন খাসিয়া সম্প্রদায়ের দুটি পরিবার।  

    রিমায়া খংলা , মেয়ের রিশন কংওয়াং হৃদয়বিদারক ফেসবুক স্ট্যাটাস টি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

    আমি রিমায়া খংলা ,রিশন কংওয়াং এর একজন ছোট মেয়ে । সম্প্রতি গত ২৯শে জুলাই ২০২৫ , মাঝরাতে কিছু দুর্বৃত্ত এবং দু্স্কৃতকারিরা আমাদের সেই একমাত্র পানবাগান থেকে প্রায় দুই হাজার এর বেশি পান গাছ কর্তন করেছে । আমাদের জীবিকা ও সংসার চলে একটি মাত্র জুমে (পান-সুপারি বাগানে) যেখানে আমার বাবা পান চাষ করছে। কিন্তু আজ অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, সম্প্রতি কিছু দুর্বৃত্তরা আমাদের সেই একমাত্র পানবাগানটি থেকে পান গাছ গুলো কেটে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এই নিষ্ঠুর ঘটনার ফলে আমাদের পরিবারের উপর ভয়ানক আর্থিক ও মানসিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের পরিবারের সংসার খরচ , ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ যে কিভাবে চলবে এই চিন্তা করতেও ভয় পাচ্ছি । বাবার চেহারাটা দেখলে কলিজা টা ফেটে যায়, এই মানুষটি আমাদের বড় করতে তার জীবনে কতটা কষ্ট করেছে, এখন আর বাবার কাছে কিছু আবদার করতে মন চায় না, শুধু ভাবি কি করলে বাবার কষ্ট কমবে..! একটা নতুন করে পান বাগানে পরিপূর্ণভাবে পান গাছ গড়তে আনুমানিক প্রায় ৫ বছর সময় লেগে যায় ।

    এই সময়ের মধ্যে আমাদের সংসার যাবতীয় খরচ, ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ আরও কত কিছু রয়েছে তা কিভাবে চলবে? আমরা সবাই ক্ষুব্ধ এবং ব‍্যথিত। সব থেকে বড় কষ্ট কি জানেন যখন বাবা সবার সামনে কেঁদে ফেলে । যেখানে আমার পরিবার সম্পূর্ণ নির্ভর করে একটি পান জুমের উপর, সেখানে সেটি ধ্বংস করে দেওয়া মানে আমাদের বাঁচার শেষ ভরসাটুকু কেড়ে নেওয়া। মানুষ কেন এত নিষ্ঠুর হতে পারে?  

    ছোটবেলা থেকেই দেখছি, আমার বাবা কত কষ্ট করে, ঘেমে-নেয়ে পান-সুপারির বাগানে কাজ করছেন—শুধু আমাদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে, আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে, একটা সম্মানের জীবন দিতে।

    কিন্তু আজ কলম ধরতে গিয়েও হাত কাঁপছে।

    ২৯শে জুলাই, ২০২৫—এই দিনটা আমাদের জীবনে চিরকাল একটা দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে। এই পানজুমই ছিল আমাদের সংসারের চালিকাশক্তি। এখান থেকেই চলতো বাজার খরচ, ওষুধপত্র, ভাইবোনদের পড়াশোনার ফি। এখন কিছুই নেই—এক নিমিষে সব শেষ।

    আমার বাবা, যিনি সারা জীবন এই গাছগুলোর মতোই ধৈর্য ধরে সংসার টিকিয়ে রেখেছেন, সেই মানুষটাকে আজ একদম ভেঙে পড়তে দেখছি।

    পান গাছ বড় করে তোলার জন্য কমপক্ষে ৫ বছর সময় লাগে।

    তার মানে পরবর্তী পাঁচটা বছর আমরা শূন্য হাতে বাঁচার চেষ্টা করবো। কিন্তু একটা পরিবার খালি শূন্যতায় কীভাবে টিকে থাকবে? বই-খাতা, বাজার, বিদ্যুৎ, ওষুধ—সবই এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন কৃষকের গাছ মানেই শুধু পাতা বা ফল নয়, সেটাই তার স্বপ্ন, জীবিকা,তার ভবিষ্যৎ, তার জীবন। সেই স্বপ্নটা রাতারাতি কেটে ফেলা হয়েছে।

    এই নির্মম ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

    আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হোক এবং আমাদের এই ক্ষতির জন্য আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক।

    আমাদের প্রতি এই অন্যায় যেন উপেক্ষিত না হয়। আমরা আশা করি, প্রশাসন মানবিকতার দৃষ্টিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

    উল্লেখ্য পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্য, সোমবার (২৮ জুলাই) দিনগত গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত বাগান দুটির আনুমানিক বাজারমূল্য কোটি টাকারও বেশি বলে দাবি করছেন মালিকরা। এ ঘটনায় পুরো খাসিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন