ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং করণীয়: দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, চাই সমন্বিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা


দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ফের উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। শনিবার (২ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০৯ জন। এই পরিসংখ্যান একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকির আভাস দিচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতাও স্পষ্ট করছে।
বর্তমানে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাইরের বিভাগগুলোয় রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে, যা স্পষ্টতই বোঝায় ডেঙ্গু এখন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক সমস্যা নয়, বরং এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২৫ সালে এসে আমরা যেন বারবার একই সমস্যায় পড়ছি, অথচ প্রতিবারই নিরসনে দেখা যাচ্ছে পরিকল্পনার ঘাটতি ও সমন্বয়ের অভাব।
ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ’ এই কথাটি বারবার বলা হলেও বাস্তবতা হলো, আমরা প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে এখনও কার্যকর নই। নগর এলাকার পানি জমে থাকা ড্রেন, নির্মাণাধীন ভবন ও আবর্জনার স্তূপ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি এবং জনসচেতনতার অভাব, সব মিলিয়ে এডিস মশার বংশবিস্তার নির্বিঘ্নেই ঘটে চলেছে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। মশানিধন কার্যক্রম প্রতীকী ও অস্থায়ী, বর্ষা এলেই কিছুদিন জোরেশোরে স্প্রে চালানো হয়, কিছু ‘মশা মারার’ ছবি প্রচারে আসে, তারপর পরিস্থিতি আবার অবহেলিত হয়।
বর্তমানে যখন বরিশাল ও চট্টগ্রামের মতো এলাকায় একসঙ্গে কয়েক ডজন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তখন গ্রামীণ স্বাস্থ্য অবকাঠামো কতটা প্রস্তুত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ঢাকায় চিকিৎসা পাওয়া যায়, কিন্তু জেলা ও উপজেলাগুলোর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, পর্যাপ্ত বিছানা, প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা চিকিৎসক, সবকিছুরই অভাব প্রকট।
এখন সময় আর দায় এড়ানোর নয়। বরং চাই একটি কেন্দ্রীয় সমন্বিত জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মপরিকল্পনা, যেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজ সবাই মিলে কাজ করবে।
একইসঙ্গে চাই জনসচেতনতা, নিজ বাড়ি, আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ করা, মশারি ব্যবহার করা এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু মানেই আমাদের দায়িত্বহীনতার মূল্য। আর একজন মানুষও যেন এই প্রতিরোধযোগ্য রোগে প্রাণ না হারান এটাই হওয়া উচিত আমাদের সকলের অঙ্গীকার।
