ডেঙ্গু মোকাবিলায় সময় এখনই


ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি আতঙ্ক নয়, এটি বাংলাদেশে এক স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর আমাদের অসহায়তা ও প্রস্তুতির অভাবকে স্পষ্ট করে তুলছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৫ জন। চলতি বছরের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে ২১ হাজার ৭৯৯ জন চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন, যা একদিকে স্বস্তির হলেও অন্যদিকে রোগের ব্যাপক বিস্তারের অশনি সংকেত বহন করছে।
আক্রান্তের ভৌগোলিক বিস্তারও উদ্বেগজনক। বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ প্রায় সব বিভাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু ঢাকা নয়, সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকাগুলোতেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা এই রোগের নিয়ন্ত্রণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়।
তবে শুধু মশা নিধনের কর্মসূচি বা জরুরি প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নগরায়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, এবং জলাবদ্ধতা এডিস মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তাই উন্নত নকশায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, এবং অব্যবহৃত পানি জমে থাকা স্থানে নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।
সচেতনতা গড়ে তোলার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, জনগণকেও এই যুদ্ধে অংশ নিতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ, বাগান, এমনকি অফিস ও স্কুল-কলেজে পানির জমাট জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গুতে প্রতিটি মৃত্যু কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি একেকটি পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি, যা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। এখন সময় এসেছে প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, পর্যাপ্ত হাসপাতালের শয্যা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা শুধু স্বাস্থ্য খাতের অদক্ষতাই নয়, এটি আমাদের নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিরও ব্যর্থতা। তাই এখনই সকলে মিলে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করতে হবে, অন্যথায় আগামী বছরগুলোতে ডেঙ্গু আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে, যার মূল্য আমাদের জীবন দিয়ে দিতে হবে।
