দুদকের জালে ইবিএলের চেয়ারম্যান শওকত আলীর পরিবার


ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৮ হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে দুদক আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের মাধ্যমে এই তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, শওকত আলী ও তার পরিবার জাহাজ ভাঙার ব্যবসার আড়ালে শেল কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। আইনজীবী কামরুল ইসলাম গত ১৪ সেপ্টেম্বর ও ৮ অক্টোবর দুদকে দুটি পৃথক চিঠি পাঠিয়ে এই অভিযোগ করেছেন।
বিএফআইইউ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শওকত আলী, তার স্ত্রী তাসমিয়া আমবারিন, মেয়ে জারা নামরিন ও ছেলে জারান শওকত আলী চৌধুরী ২৮টি ব্যাংকে ১৮৭টি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেছেন। এসব অ্যাকাউন্টে জুন ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে এবং ৮ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শওকত আলী ইবিএলে ১৫ শতাংশ শেয়ারধারী, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০ শতাংশ সীমা অতিক্রম করে। আরও ৫ শতাংশ শেয়ার তিনি শেল কোম্পানির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
তদন্তে দেখা গেছে, অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিদেশে সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নেন। উদাহরণস্বরূপ, দুবাইয়ের লানসি আইল্যান্ডে ৩০০ কোটি টাকার বিলাসবহুল ভিলা বিক্রির চেষ্টা চালানো হয়েছে।
শওকতের শিপিং কোম্পানি এসএন করপোরেশনের নামে খোলা এলসিতে অসংগতি পাওয়া গেছে। কিছু এলসি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত শেল কোম্পানির নামে খোলা হয়েছে, যেগুলোর ঠিকানা এক এবং কার্যক্রম যাচাইযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিকভাবে এই দ্বীপকে অর্থ পাচারের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বিএফআইইউ-এর খসড়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শওকতের ঢাকা ব্যাংকের এক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। একই সময়ে ইবিএলের কোম্পানি সচিব তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ১২৫ বার নগদ অর্থ উত্তোলন করেছেন।
মেয়েরা ও ছেলে জারানও বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অর্থ স্থানান্তর ও শেয়ারবাজার বিনিয়োগ করেছেন, যদিও জারান নিজেকে ‘বেকার’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জুলাই শওকত আলী ও তার পরিবারের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। দুদক এখন আনুষ্ঠানিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছে।
শওকত আলী চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দেননি।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিবারটির কর্মকাণ্ডে ব্যাংক লেনদেন ও শেয়ারধারণার সীমা অতিক্রম, শেল কোম্পানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন, বিদেশে বিলাসবহুল সম্পদ স্থানান্তর এবং নগদ উত্তোলনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। এই সব প্রমাণ দুদক ও আন্তর্জাতিক মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ মানদণ্ড অনুযায়ী গুরুত্বসহকারে তদন্তের বিষয়।

 
                 
                                 
                                             
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    