ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতা রাফির ত্রাস, টেন্ডারবাজি!

ঢাকার ওয়ারী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মাদ রাফি এক সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগে এক আতঙ্কের নাম ছিলেন। ৭ বছরের মুকুটবিহীন রাজত্বের সময় তার নেতৃত্বে ওয়ারী থানা ছাত্রলীগ দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ইউনিটগুলোর মধ্যে একটি হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাফির সময়কাল ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের জন্য “প্রভাব ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।” রাফি অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, সরকারি ঠিকাদারি ব্যবসা ও জোরপূর্বক টেন্ডার দখলকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে দেখতেন। প্রধান আয়ের উৎস ছিল পিডাব্লিউডি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি প্রকল্প। তার সিন্ডিকেটে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট কাউসার মোল্লার ভাগ্নে, পিডাব্লিউডি ঠিকাদার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাসান মোল্লা, ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সাংসদ বাহাউদ্দিন নাসিমের ঘনিষ্ঠ কর্মী মোঃ রফিক, এবং মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান।
সিন্ডিকেটের হাতে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বর্তমান ডিসি ওয়ারী অফিসের ১০ তলা ভবন, ডেমরা ডিএমপি পুলিশ ওয়ার্কশপ, বাসাবো কলেজের ৪ তলা ভবন, আজিমপুর গার্লস স্কুলের ৫ তলা ভবন, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অডিটোরিয়াম, এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো টেন্ডার দখল। এছাড়াও সিলেট, চিটাগাং, বরিশাল, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে তারা জোরপূর্বক টেন্ডার দখল করেছিল।
রাফির নামে বিভিন্ন ব্যবসাও পরিচালিত হতো, যার মধ্যে ছিল গাড়ি ইম্পোর্ট, অটো মোবাইল সেন্টার, গার্মেন্টস আইটেম ইত্যাদি। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক গ্রুপিংকে শক্তিশালী করতে সবসময় বিশ্বাসী ছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামীলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফীর ছোট ছেলে, সাবেক কাউন্সিলর (কমিশনার) ইমতিয়াজ গৌরব। একাধিকবার ওয়ারী, কাপ্তান বাজার ও গুলিস্তান মুরগির বাজারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত ঘটেছে।
প্রশাসন এই দুই শক্তিশালী গ্রুপের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণত নিশ্চুপ ছিল। গোপন সূত্রে জানা গেছে, রাফি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে দেশ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি নেপাল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও সিঙ্গাপুরে দেখা গিয়েছেন, তবে বর্তমানে তার অবস্থান নিশ্চিত নয়।
এক সময় তিনি অস্ত্রের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানকে জোরপূর্বক কমিটি আদায় করিয়ে সভাপতির দায়িত্বে বসেছিলেন। বিদেশে থাকলেও রাফি এখনও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সংস্থার গোপন সূত্র বলছে, শেখ পরিবারের সরাসরি আর্শীবাদ থাকায় রাফি কখনো রাজনৈতিক অঙ্গনে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সূত্রের খবর, আওয়ামীলীগ ফের ক্ষমতায় এলে রাফি ও তার সহযোগীরা আবারও শক্তিশালী হয়ে টেন্ডারবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।