রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
Natun Kagoj
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিজিটাল দুর্নীতি

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় হাজার কোটি টাকার লুটপাট

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় হাজার কোটি টাকার লুটপাট
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ভয়াবহ দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি টেন্ডার, সরবরাহ এবং বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, যেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলী সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন।

ভুয়া আমদানির কেলেঙ্কারি:
Rangpur Metal Industries Ltd., প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, গত দুই-তিন বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার লিফট সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে। শর্ত ছিল ফিনল্যান্ডের Kone Lift সরবরাহ করা কিন্তু বাস্তবে সরবরাহ হয়েছে ভারতের তৈরি লিফট। শিপমেন্ট দেখানো হয়েছে জার্মানি থেকে, যেখানে Kone-এর কোনো কারখানা নেই। এর ফলে ইউরোপীয় দামের নামে বিপুল অংকের বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

ফায়ার পাম্পে জীবনসংহারী প্রতারণা:
Property Development Ltd. গণপূর্তের বিভিন্ন প্রকল্পে UL listed Fire Pump সরবরাহের চুক্তি নিলেও বাস্তবে সরবরাহ করা হয়েছে নকল ও Non-UL listed Pump। এতে কোটি কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে এবং জননিরাপত্তা সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে থাকবে।

একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি:
Rangpur Metal Industries Ltd. একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার করে সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে। Rangpur Metal Industries Limited – ১০১টি কাজ → ২৮৮.৪৮ কোটি টাকা। Rangpur Metal Industries Ltd. – ১১২টি কাজ → ৭৭১.৩৯ কোটি টাকা।

মোট ২১৩টি ওয়ার্ক অর্ডারে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,০৬০ কোটি টাকা। কোম্পানির মালিকানা, পরিচালনা পর্ষদ ও ঠিকানা এক হলেও ভিন্ন BIN ও TIN ব্যবহার করা হয়েছে।

গণপূর্ত কর্মকর্তাদের অব্যাহত সহযোগিতা:

সিন্ডিকেটের মূল সদস্যরা হলেন, মাসুম বিল্লাহ (এসডিই, শের-ই-বাংলা নগর ৩ নং উপবিভাগ) টেন্ডার অনুমোদন ও বিল পাসে সরাসরি সুবিধা প্রদান, মিজানুর রহমান (নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা জোন) ভুয়া শিপমেন্ট যাচাই না করে অনুমোদন, রফিকুল ইসলাম (নির্বাহী প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম জোন) – UL listed নয় এমন Fire Pump গ্রহণে সহযোগিতা, আলমগীর হোসেন (নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর দপ্তর) একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নামের টেন্ডার অংশগ্রহণ বৈধতা, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার কমিশন ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

আরইবি’র চেকেও ফাঁকি:
Rangpur Metal Industries Ltd. বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) কে ৬০০ কিলোমিটার D-27 কন্ডাক্টর সরবরাহের সময় ৭৫০টি খালি কন্ডাক্টর ড্রাম পাঠিয়েছে। প্রাক-পরিদর্শন ও গুদাম পরিদর্শনে দেখা গেছে, ৪০৪ নম্বর ড্রামে কোনো কন্ডাক্টর ছিল না। এছাড়া ২৯৯টি ড্রামের মধ্যে আরও কিছু খালি থাকতে পারে। আরইবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনঃপরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় পণ্যের নামে ভারতীয় পণ্য সরবরাহ এবং ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। নকল Fire Pump ব্যবহার, কম মানের লিফট, নিম্নমানের কন্ডাক্টর সরবরাহ করা কারনে জননিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার, e-GP সিস্টেমে স্বচ্ছতার অভাবে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার দুর্বলতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া এই ধরনের প্রতারণা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে যে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করছে।

সর্বপরি, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এই দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, জনগণের জীবন ও নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক। সরকারি প্রকল্পে মানহীন যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও টেন্ডারবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন