সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • এ দেশে চরমপন্থা ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য যেন পরিণত হতে না পারে: তারেক রহমান যিনি সম্মানের যোগ্য, তাকে সেই সম্মান দিতে হবে: মাহফুজ আলম নির্বাচনী প্রস্তুতি যথাযথভাবে নিচ্ছে ইসি, তবে আইনশৃঙ্খলা কিছুটা দুর্বল যেভাবে বুঝবেন আপনার বন্ধুরা ছদ্মবেশী ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বদলে কী কী চান পুতিন লালবাগে গণপিটুনিতে নিহত যুবক কিলার বাবু প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার চীনের উন্নত সাবমেরিনে সজ্জিত পাকিস্তান, উদ্বেগে ভারত একনেকে ১১টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৯,৩৬১ কোটি টাকা এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাফুফের পুরস্কার পাননি সাবিনারা
  • সংসারে দায়িত্বশীল হতে পুরুষদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী স্কুল

    সংসারে দায়িত্বশীল হতে পুরুষদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী স্কুল
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সেনেগালে পুরুষদের আরও দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল স্বামী হিসেবে গড়ে তুলতে জাতিসংঘ চালু করেছে বিশেষ উদ্যোগ। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ নামের একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্কুল। এখানে আক্ষরিক অর্থেই শেখানো হয়—কীভাবে একজন পুরুষ তার পরিবার ও স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীল স্বামী হতে পারেন।

    প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় গৃহস্থালি কাজে পুরুষদের অংশগ্রহণ এবং স্ত্রীর প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণে। স্কুলটির শিক্ষার্থীরা শেখে, সংসার শুধু নারীর দায়িত্ব নয়—বরং দুজনের সমানভাবে ভাগাভাগি করা দায়িত্ব।

    স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব ইব্রাহিম ডায়ান বলেন, “এমনকি নবীজি (সা.)-ও বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী-সন্তানকে কাজে সাহায্য করে না, সে ভালো মুসলিম নয়।”

    জাতিসংঘের এই উদ্যোগ স্থানীয় সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং পরিবারে নারী-পুরুষের সমতা ও সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।

    পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশের মতো সেনেগালেও যে কোনো কিছুতে পুরুষের কথাই শেষ কথা। এমনকি পরিবার পরিকল্পনাসহ জীবন বদলে দেওয়ার মতো বড় বড় সিদ্ধান্তেও নারীদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না।

    নারীর জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর জন্যও পুরুষ সদস্যের ‘অনুমতি’ নিতে হয় তাদের। সেই দৃশ্যপটে কিছুটা পরিবর্তন আনতে দেশটিতে বিশেষ এই কর্মসূচি চালু করেছে জাতিসংঘ।

    এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য সমাজের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ‘ইতিবাচক পুরুষত্ব’ (পজিটিভ ম্যাসকুলিনিটি) জাগিয়ে তোলা।

    ইমাম ইব্রাহিম জানান, ইতিবাচক পুরুষত্ব শেখাতে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট টানেন তিনি। কারণ, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীল। জেন্ডার এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও পুরুষদের সচেতন করার চেষ্টা করেন তিনি। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে শুরু করে এইচআইভির মতো রোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

    শুক্রবার জুমার নামাজের পরের খুতবায়ও এসব নিয়ে আলোচনা করেন ইব্রাহিম। তিনি বলেন, অনেক নারী আমার খুতবার প্রশংসা করেন। তারা আমাকে জানান, তার খুতবা এবং স্কুল ফর হাসবেন্ডের ক্লাসগুলো করার পর তাদের স্বামীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি পুরুষরাও তাকে জানিয়েছেন যে তারা এখন একজন স্বামী এবং বাবা হিসেবে নিজেদের আরও উন্নত করতে চান।

    হাবিব ডিয়ালো নামের ৬০ বছর বয়সী এক পুরুষ জানান, ইমামের খুতবা আর জাতিসংঘের কর্মসূচির ক্লাস করার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন বাড়িতে সন্তান জন্মদান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

    তিনি বলেন, আমার ছেলের বউ যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল, তখন আমি তাদের হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে উৎসাহিত করি। যদিও প্রথমে আমার ছেলে একটু আপত্তি করছিল। হাসপাতালে খরচ কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। কিন্তু আমি যখন তাকে বুঝিয়ে বলি যে এটা তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কতটা জরুরি, তখন যে বুঝতে পারে এবং রাজি হয়।

    ২০১১ সাল থেকেই সেনেগালে এই কর্মসূচি চালিয়ে আসছে জাতিসংঘ। তবে, সম্প্রতি দেশটির নারী, পরিবার, লিঙ্গ ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে এটি।

    বর্তমানে দেশটির সরকার এই কর্মসূচিকে মাতৃত্বকালীন মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছে। শুধু সেনেগাল নয়, নাইজার, টোগো, বুরকিনা ফাসোসহ আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে চলছে জাতিসংঘের এই ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ কর্মসূচি। জাতিসংঘ বলছে, এই দেশগুলোতে নারী স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হয়েছে।

    শুধু মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নয়, এই কর্মসূচিতে নারী অধিকার, সমতা, নিরাপদ যৌনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

    সেনেগালজুড়ে এই প্রকল্পের প্রায় ২০টি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ পুরুষকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এই ৩০০ পুরুষ এখন নিজের জনবসতিতে তার অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।

    তবে, এই প্রকল্পে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা বাছাই করে জাতিসংঘই। সামাজিকভাবে যারা নিজ এলাকায় সম্মানিত, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন, নেতৃত্বের গুণ রয়েছে- এমন পুরুষদেরই বাছাই করা হয়। যেহেতু নিজ নিজ এলাকায় তারা সম্মানিত, তাই সমাজে তাদের একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা থাকায় সেটি কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষণে যা শিখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন তারা।

    খারি নডেয়ে নামের ৫২ বছর বয়সী এক নারী জানান, তার স্বামী আগে কোনো কাজেই হাত লাগাতেন না, কিন্তু এখন তিনি রান্নাও করেন।

    ২০২৩ সালে প্রতি ১ লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২৩৭ জন মা মারা গেছেন। একইভাবে, নবজাতকের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না- প্রতি ১ হাজার জন শিশুর মধ্যে ২১ জনই জন্মের প্রথম মাসেই মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ

    আরও পড়ুন