বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক প্রাণের তিন কর্মীর কারাদণ্ড, কোম্পানির দাবি ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ ভয় নয়, সচেতন করতেই এমন বিজ্ঞপ্তি: এনবিআর চেয়ারম্যান শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামানোর চেষ্টা চলছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর, নিম্নাঞ্চল প্লাবনের আশঙ্কা অবৈধ অভিবাসনের মরীচিকা ও বেদনাদায়ক বাস্তবতা উড়োজাহাজ সংকটে দুবাই ও কুয়েত ফ্লাইট বাতিল করল বাংলাদেশ বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই জাহাজ কেনার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চল ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ইউক্রেন!
  • মাদুর শিল্প হারানোর পথে, সংগ্রামে যুক্ত আছেন কারিগররা

    মাদুর শিল্প হারানোর পথে, সংগ্রামে যুক্ত আছেন কারিগররা
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বাতুয়াডাঙ্গা, মাদরা ও কলাগাছি গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠোনে একসময় মাদুর তৈরির নৈপুণ্য ছড়িয়েছিল। নারীরা মাদুর বোনায় দিনরাত ব্যস্ত থাকতেন, যা ছিল তাদের অন্যতম প্রধান জীবিকা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। কিন্তু আধুনিক জীবনের পরিবর্তনে ও প্রযুক্তির আগমনে ধীরে ধীরে এই শিল্পের স্বাভাবিক চাহিদা কমতে শুরু করেছে। মাদুর তৈরির ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার পথে, তবে তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি। আজও কিছু সৃজনশীল মানুষ ও স্থানীয় কারিগররা এই মাদুর শিল্পকে ধরে রাখতে নিরলস পরিশ্রম করছেন, যেন নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানে ও তা জীবিত থাকে।

    সরেজমিনে তালা উপজেলার বাতুয়াডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধূ মঞ্জুরি রানী সরকার এখনো মাদুর বোনার কাজে লিপ্ত। স্বামী পিযুষ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে মাদুর বুনেই চলে তাদের সংসার। নেই জমিজমা, নেই সরকারি সহায়তা- তবুও থেমে নেই তাদের শ্রম ও আশা।

    মঞ্জুরি রানী বলেন, ‘এই মাদুরই আমাদের জীবন। যেদিন মাদুর বুনি না, সেদিন মনে হয় ক্ষুধাটা যেন আরও বেশি লাগে। একটা মাদুর বানাতে এক দিন সময় লাগে। ছোট মাদুর বিক্রি করি ৩০০ টাকায়, বড়টা যায় ৪০০ টাকায়। খরচ বাদ দিলে হাতে তেমন কিছুই থাকে না।’

    বর্তমানে তালার একটি বেসরকারি সংস্থা মুক্তি ফাউন্ডেশন কিছুটা সহযোগিতা করছে। তারা মাদুর তৈরির কারিগরদের মূলধন দিয়ে থাকেন, যাতে তারা আবারও কাজ শুরু করতে পারেন। তবে বাজার চাহিদার অভাব এবং সস্তা রেক্সিন বা প্লাস্টিক ম্যাটের কারণে মাদুরের কদর কমে গেছে। ফলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

    পিযুষ সরকার বলেন, ‘দলুয়া, খলিষখালী, পাটকেলঘাটা, তালা হাটে মাদুর বিক্রি করি। অনেক সময় বিক্রি হয়, আবার অনেক সময় সব নিয়ে ফিরে আসতে হয়। একসময় ২০০-৩০০ পরিবার এই পেশায় ছিল, এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২০-৩০টিতে।’

    মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ ‘মেলে’ চাষও এখন প্রায় বন্ধ। আগে বর্ষায় মেলে লাগানো হতো আর শুকনো মৌসুমে তা কেটে ঘরে তুলে মাদুর বোনা হতো। খরচ কম, সময়ও কম- তবু জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টি ও নদীভাঙনের কারণে এই চাষ বিলুপ্তির পথে।

    খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কামরুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাবে মেলে চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে এই ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।’

    মুক্তি ফাউন্ডেশনের পরিচালক গোবিন্দ ঘোষ জানান, ‘মাদুরশিল্প টিকিয়ে রাখতে ৫০টি পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি বিভাগের সহায়তায় মেলে চাষে ৫০টি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে, প্রতিটি প্লটের জন্য দেওয়া হয় ১৫ হাজার টাকা।’

    এ বিষয়ে স্থানীয় কলেজ শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘মাদুরের কাঁচামাল আমদানি না করে স্থানীয়ভাবে মেলে চাষে উৎসাহ দিতে হবে। সহজশর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বিপণনের সুযোগ এবং অনলাইন ও আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় যুক্ত করতে পারলে এই শিল্পে আবারও প্রাণ ফিরতে পারে।’

    তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, ‘আগে এই অঞ্চলে ব্যাপক হারে মেলে চাষ হতো। এখন তা প্রায় বিলুপ্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে পরিকল্পিত সহায়তা পেলে আবারও মেলে চাষ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’


    দৈএনকে/জে, আ
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ