ভুয়া দূতাবাস খুলে ৩০০ কোটি টাকা প্রতারণা, ১৬২ বার বিদেশ ভ্রমণ!


ভারতের গাজিয়াবাদে দীর্ঘ আট বছর ধরে একটি ভুয়া দূতাবাস পরিচালনা করছিলেন হর্ষবর্ধন জৈন। প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে জানা গেছে, তিনি বিভিন্ন দেশের নামে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে দূতাবাস পরিচালনা করতেন এবং এর মাধ্যমে মোট প্রায় ৩০০ কোটি রুপি অবৈধভাবে আয় করেছেন।
জানা যায়, তার নামে একাধিক বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং গত ১০ বছরে তিনি ১৬২ বার বিদেশ সফর করেছেন। এতবার বিদেশ যাত্রা এবং আর্থিক লেনদেন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে বিষয়টি তদন্তে আসে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার প্রতারণার জাল এতটাই বিস্তৃত ছিল যে বহু মানুষ এই ভুয়া দূতাবাসের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন।
গত সপ্তাহে ভারতের গাজিয়াবাদের একটি দুই তলা ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবনটিকে দূতাবাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উত্তরপ্রদেশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) জেইনের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। আর এতেই উঠে আসে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। চাকরি দেয়াড় নাম করে প্রতারণা, অর্থ পাচারসহ আরও একাধিক তথ্য উঠে আসে।
ভুয়া দূতাবাস হিসেবে ব্যবহৃত ভবনে অভিযানকালে ভুয়া কূটনৈতিক নম্বর প্লেটসহ চারটি গাড়ি জব্দ এবং লাক্সারি ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আগামীকাল হর্ষবর্ধন জেইনকে আদালতে তোলা হবে। পুলিশ বলেছে, জেইন প্রায় ৩০০ কোটি রুপি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকতে পারে।
গাজিয়াবাদে অবস্থিত দুই তলা বিশিষ্ট ভবনটির সামনে একটি নাম প্লেট ছিল। যেখানে গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়েস্টার্কটিকা এবং এইচ ই এইচভি জেইন অনারারি কনসাল লেখা ছিল। ভবনটির সামনেই ভারত ও ওয়েস্টার্কটিকার পতাকা উড়ছিল। যদি অ্যান্টার্কটিকা একটি ক্ষুদ্র জাতি। কোনো সার্বভৌম দেশের দ্বারা এর কোনো স্বীকৃতি নেই।
তদন্তকারীদের মতে, জৈন পরিচিতি বাড়ানোর জন্য ছদ্মবেশ ধারণা করে এই কাজ করেন। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলতেন। তদন্তে জানা গেছে, এই ভুয়া দূতাবাসটি ২০১৭ সাল থেকে চালু ছিল। জৈন ‘দূতাবাসের’ বাইরে একাধিক সামাজিক কাজসহ দাতব্য কার্যক্রম আয়োজন করতেন, যেন সবকিছু সত্যি মনে হয়। তিনি ছয় মাস আগে এই ভবনটি ভাড়া নেন, যদিও প্রায় আট বছর ধরে তিনি এই ভুয়া দূতাবাস পরিচালনা করছিলেন।
এদিকে ওয়েস্টার্কটিকা জানিয়েছে, ‘জৈনকে আমাদের সংগঠনের প্রতিনিধি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, আমাদের নির্বাহী দল বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখছে এবং যারা জৈনের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। আমরা ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পুরোপুরি সহযোগিতা করব।’
মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি ২০০১ সালে ওয়েস্টার্কটিকা নামে একটি মাইক্রোনেশন (ক্ষুদ্র জাতিরাষ্ট্র) প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে এর গ্র্যান্ড ডিউক হিসেবে ঘোষণা দেন।
অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত ওয়েস্টার্কটিকার আয়তন ৬ লাখ ২০ হাজার বর্গমাইল। অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার একটি ফাঁকফোকর ব্যবহার করে ম্যাকহেনরি নিজেকে এই অঞ্চলের শাসক ঘোষণা করেন। চুক্তিতে দেশগুলোর জন্য অ্যান্টার্কটিকার অংশ দাবি নিষিদ্ধ করা হলেও, অনুগতশীল ব্যক্তিদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
