আজ থেকে কারাভোগ শুরু করলেন সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি


নির্বাচনী প্রচারের জন্য লিবিয়া থেকে অর্থ সংগ্রহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির কারাভোগ আজ থেকে শুরু হয়েছে। সাজাভোগের জন্য ইতিমধ্যে তিনি কারাগারে পৌঁছেছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২০০৭ সালের নির্বাচনে তিনি লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে লাখ লাখ ইউরো নগদ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন। পরে গাদ্দাফি আরব বসন্তের সময় ক্ষমতাচ্যুত হন এবং নিহত হন।
এই ষড়যন্ত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগে সারকোজি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেই অর্থ গ্রহণ বা ব্যবহার করার অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন।
সারকোজি বারবরই ভুল কিছু করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
কারাগারে যাওয়ার আগে লা ট্রিবিউন দিমাঞ্চে পত্রিকাকে সারকোজি বলেছেন, ‘আমি কারাগারকে ভয় পাই না। কারাগারের ফটকেও আমি মাথা উঁচু রাখব।’
সারকোজিকে প্যারিসের যে লা সাঁতে কারাগারে রাখা হচ্ছে, সেখানে অতীতে বামপন্থী নেতা কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং পানামার নেতা ম্যানুয়েল নোরিয়েগাকেও রাখা হয়েছিল। এখানে নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েদিদের একক সেলে রাখা হয়। এমনকি বাইরের কর্মকাণ্ডের সময়ও তাদের আলাদা রাখা হয়।
দেশের কারাব্যবস্থার প্রধান সেবাস্তিয়ান কওলে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টকে একাকী নির্জনে রাখা হবে। লা সাঁতে কারাগারে থাকবেন সারকোজি।
কওলে আরটিএল রেডিওকে বলেন, তিনি দিনে দুবার একা একা ব্যায়ামের জায়গায় যেতে পারবেন। তিনি কারাগারে তার সেলেও একা থাকবেন।
সারকোজির আইনজীবী জাঁ-মিশেল ডারোইস ফ্রান্সইনফো রেডিওকে বলেন, তিনি পুলওভার ও ইয়ারপ্লাগ নিয়ে কারাগারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
ডারোইস বলেন, তিনি কয়েকটি ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছেন, যার মধ্যে কিছু পুলওভার রেখেছেন। কারণ, ঠান্ডা লাগতে পারে। আর কিছু ইয়ারপ্লাগও নিচ্ছেন। কারণ, সেখানে প্রচুর গোলমালও হতে পারে।
সারকোজি লে ফিগারো পত্রিকাকে জানিয়েছিলেন, তিনি কারাগারে প্রথম সপ্তাহের জন্য তিনটি বই নিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে আলেকজান্ডার ডুমার লেখা ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’ রয়েছে। এটি এমন এক ব্যক্তির গল্প যিনি অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ হন এবং যারা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের পরিকল্পনা করেন।
সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্টকে কারাগারে পাঠানোর এই সিদ্ধান্তে সারকোজির রাজনৈতিক সহযোগী ও কট্টর ডানপন্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বিএফএম টিভির জন্য করা এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফরাসি উত্তরদাতাদের ৫৮ শতাংশ মনে করেন, সারকোজির বিরুদ্ধে রায়টি ছিল নিরপেক্ষ। ৬১ শতাংশ ফরাসি আপিলের জন্য অপেক্ষা না করে সারকোজিকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে সারকোজি ও তার স্ত্রী কার্লা ব্রুনির সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। মাখোঁ গতকাল সোমবার বলেছেন, তিনি কারাবাসের আগে সারকোজির সঙ্গে দেখা করেছেন।
সারকোজির ঘনিষ্ঠ ফ্রান্সের বর্তমান বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিনআরটিএল রেডিওকে বলেন, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ছিলেন সারকোজি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি সহযোগী মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর পর প্রথম সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কারাদণ্ড ভোগ করতে যাচ্ছেন সারকোজি।
দৈএনকে/রে,আ
