রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Natun Kagoj

বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতা: চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা

বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতা: চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সর্বশেষ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য যে আটটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের আর্থিক ব্যবস্থার কতটা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আছে তা স্পষ্ট করে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রতিটি সুপারিশই একটি কার্যকর, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা গঠনের দিকে ইঙ্গিত করছে।

প্রথমেই, বছরের শেষ হিসাব প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটি শুধু কাগজে থাকা হিসাব নয়, বরং জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বচ্ছতার সূচক। বর্তমান প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের সরকার অনলাইনে বাজেট প্রস্তাব এবং প্রণীত বাজেট প্রকাশ করলেও বছরের শেষ হিসাব যৌক্তিক সময়ে প্রকাশ করতে পারেনি। এটি স্বচ্ছতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় বাধা।

দ্বিতীয়ত, বাজেট নথি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রস্তুত করার পরামর্শ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমাদের বাজেট সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিক মান অনুসারে তা পর্যাপ্ত নয়। এতে শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

তৃতীয় ও চতুর্থ সুপারিশের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় এবং রাজস্ব আয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নির্বাহী বিভাগের ব্যয় আলাদাভাবে দেখানো হয় না। এর ফলে সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং ক্রয় প্রক্রিয়ার জবাবদিহিতা অনেকাংশে অস্পষ্ট থাকে।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ পরামর্শ—সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকারি নিরীক্ষক সংস্থা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পুরো হিসাব যাচাই করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মানে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থা নিশ্চিত না হওয়ায় আর্থিক স্বচ্ছতা প্রক্রিয়া সীমিত হয়ে যায়।

প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা সপ্তম ও অষ্টম পরামর্শ, তত্ত্বগতভাবে যথাযথ। যদিও আইনগত মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে, তবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য সীমিত। অন্তর্বর্তী সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ প্রক্রিয়াকে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করেছে এবং চলমান ক্রয় প্রক্রিয়াকে স্থগিত করেছে, যা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ধরা যায়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্টে উল্লিখিত সুপারিশগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি নির্দেশিকা। এগুলো কার্যকর হলে সরকারের আর্থিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। সরকারের কাছে এখন এটি একটি সুযোগ, প্রতিবেদন অনুযায়ী যে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আরও দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উপযুক্ত করা। আর্থিক স্বচ্ছতা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো নয়, এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড।

বাংলাদেশে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা মানে শুধুই কাগজে হিসাব রাখা নয়; এটি জনগণের আস্থা, নৈতিক নেতৃত্ব এবং স্থায়ী উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা এখন সময়ের দাবী।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন