হেলপার দালালদের দৌরাত্মে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ


দালালরাই এখন পল্লী বিদ্যুতের হর্তাকর্তা। সারা অফিসে দালালদের দৌঁড়াদৌড়ি প্রতিদিনের দৃশ্য। সাধারণ মানুষ গেলে কাজ হয় না। দালাল ধরলে হয়ে যায় দ্রুত। এসব দেখে দালালের কাছেই ধরনা দেন প্রায় অনেকেই।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-চট্রগ্রাম ১ এর আনোয়ারা জোনাল অফিসে অর্ধশতাধিক হেলপার দালাল নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের আনোয়ারা জোনাল অফিসে সেবা নিতে এলে সাধারণ মানুষকে হেলপার দালালের শরণাপন্ন হতে হয়। তা নাহলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর।
একদিকে হেলপার দালালচক্রের অর্থ-বাণিজ্য অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অনিয়মের কারণে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। এই হেলপাররা নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ না হওয়া সত্বেও তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সেবা গ্রহণকারীরা।
সরকারি নিয়মে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ পেতে মিটারপ্রতি আবেদন ফি একশ’ত আটত্রিশ টাকা, জামানত ফি নয়শ পঁয়ষট্টি টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু দালালদের দৌরাত্ম্যে নতুন গ্রাহকদের মিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ারা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে এই হেলপার দালালদের দৌরাত্ম দেখা যায়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সাধারণ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে সেবা নিতে গেলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দুর্ব্যবহার করেন। মাসের পর মাস ঘুরেও সমাধান পায়না তারা। তবে হেলপার দালাল ধরে সহজেই কাজ হয়ে যাচ্ছে।
এদের মধ্যে চাতরীর মো: আবুল কালাম, মো: মুবিন, বটতলীর মো: আরিফ, জুইদন্ডীর মো: হারুন , বরুমছড়ার মো: ইউনুস সহ আরো অনেকে এই পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে জিম্মি করে রেখেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিভিন্ন অভিযোগ কেন্দ্রের আওতায় এই হেলপার দালালরা প্রতিনিয়ত অফিসের লাইনম্যানদের যোগসাজশে গ্রাহকদেরকে হয়রানি করে। এই হেলপাট দালালরা যত রকমের অবৈধ কাজ আছে লাইনম্যানদের মাধ্যমে অফিসে টাকা জমা না দিয়েই অবৈধভাবে বিভিন্ন কাজগুলো করে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন রকমের ট্রান্সফরমার সরানোর কাজ অফিসে না জানিয়েই করে ফেলে। এমনকি গ্রাহকের ভাঙ্গা মিটার খুলে অফিসে নিয়ে আসলে ফি জমা না দিয়ে লাইনম্যানদের মাধ্যমে এই হেলপাট দালালরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আরো অভিযোগ রয়েছে কোন লাইন বন্ধ করতে হলে ঐ হেলপার দালালরা সাব স্টেশন বন্ধ করে।পরে ওরাই আবার চালু করে। কিন্তু এই কাজ তাদের করার কন অধিকার নেই।এই কাজ করে সাধারণত লাইনময়ানরা।
অনেকসময় কাজ না করিয়ে হেলপার দালালদের নামে ভুয়া লেবার বিল তৈরি করে অফিস থেকে টাকা হাতিয়ে নেই । এই হেলপার দালালরা বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল এনে অফিসে জমা না দিয়ে টাকাগুলো নিজেরা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই হেলপার দালালদের কারণে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। হেলপার দালালরা প্রতিনিয়ত অফিসের লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদেরকে হয়রানি করছে। অভিযোগ রয়েছে এই কাজে সহযোগিতা করছেন এজিএম শাহিন আলম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা নিজে নিজে নতুন সংযোগ মিটার আবেদন করে মাসের পর মাস ঘুরেও সংযোগ পাচ্ছেন না। তদন্তের নামে ঘুরে গিয়ে আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। যারা দালাল ধরে আবেদন করে তারা দ্রুত মিটার পেয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার ও এজিএম এর অফিস রুমে আনাগোনা করছে এসব হেলপার নামের দালালরা। তাদের বেশিরভাগই আড্ডা খানা এসব রুমে। গ্রাহকরা অফিসে গেলেই কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে সেবা না পেয়ে এসব হেলপার দালালের শরনাপন্ন হতে হয়।
আনোয়ারা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এরকম কোন দালাল আমার অফিসে নেই। আমি এসব দালালদের প্রশ্রয় দেইনা। যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদেরকে আমার সাথে সরাসরি দেখা করতে বলেন।আমি তাদের অভিযোগ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
চট্রগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ -১ এর জেনারেল ম্যানেজার ( জি এম) দিলীপ চৌধুরী বলেন,এই বিষয়ে আমি কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি,এই বিষয়ে ঐ জোনাল অফিসের ডিজিএম এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তারপরও আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
