অসহনীয় শোকেও থেমে থাকেননি, কিডনি দান করে দুই প্রাণ বাঁচালেন সন্তানহারা মা


অকল্পনীয় এক শোকের মুহূর্তেও মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন করাচির চিকিৎসক ডা. মেহের আফরোজ। ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলে সৈয়দ সুলতান জাফর ব্রেন-ডেড হওয়ার পর তিনি ছেলের দুটি কিডনি দান করে বাঁচিয়ে দিলেন দুটি প্রাণ।
ডা. আফরোজ সিন্ধু ইনস্টিটিউট অব ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লানটেশনের (এসআইইউটি) কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক।
২৩ বছর বয়সী সুলতান জিয়াউদ্দিন মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজের একজন ডেন্টাল ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত দুই চিকিৎসক অধ্যাপক টিপু সুলতান এবং অধ্যাপক ডা. শেরশাহ সাঈদের নাতি।
এই মানবিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জিও নিউজ।
অধ্যাপক টিপু সুলতান জানান, গত বুধবার করাচির একটি প্রাইভেট হাউজিং সোসাইটিতে বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি চালাতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন সুলতান। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
‘মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় দুটি পৃথক ক্র্যানিওটমি অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রথমে কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা গেলেও মঙ্গলবার হঠাৎ অবস্থার অবনতি ঘটে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বিকেল ৪টার দিকে তার সব রিফ্লেক্স হারিয়ে যায়,’ বলেন অধ্যাপক টিপু।
এরপর দীর্ঘ আলোচনার পর ছেলের অঙ্গ দান করার সাহসিক সিদ্ধান্ত নেন ডা. আফরোজ। তিনি নিজে তার ছেলের মরদেহ এসআইইউটি-তে নিয়ে যান, যেন সময়মতো অঙ্গ সংগ্রহ করা যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুইটি কিডনি সফলভাবে দুই রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যারা বহু বছর ধরে ডায়ালাইসিসে ছিলেন এবং পরিবারে কোনো ডোনার পাননি। দুঃখের বিষয়, তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত গ্রহীতা না থাকায় অন্য কোনো অঙ্গ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।
সুলতানের দাদা ডা. শেরশাহ সাঈদ বলেন, ‘ডা. মেহের আফরোজ শুধু একজন অসাধারণ চিকিৎসক নন, তিনিই প্রকৃত মানুষ, একজন সাহসী মা। তিনি পুরো সমাজের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন।’
এসআইইউটি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আদিব রিজভ বলেন, ‘এই অনন্য ত্যাগ ও দানের মধ্য দিয়ে তারা দুটি জীবনকে নতুন সুযোগ দিয়েছেন। সমাজের উচিত এই সাহসী উদাহরণ অনুসরণ করা।’
পাকিস্তানে এখনও মৃতদেহ থেকে অঙ্গ দান নিয়ে সংস্কার ও ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। অথচ, হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর কিডনি, লিভার, ও হৃদরোগে প্রাণ হারান, যাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো অঙ্গদানের মাধ্যমে।
‘সুলতান জাফরের মা তার একমাত্র পুত্রকে হারিয়েছেন, এখন কেবল দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তবুও তিনি অন্যদের নতুন জীবন দিয়েছেন-এটাই মানবতা,’ বলেন অধ্যাপক টিপু সুলতান।
কোহি গথে তার বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সুলতান। আর এই মর্মান্তিক শোকের মধ্যেও তার মায়ের সাহস এবং উদারতা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা হাজারো মানুষের জন্য হয়ে উঠল নতুন আশার আলো।
