শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে কোনো সিদ্ধান্ত নয়, কোচ-প্রস্তুতি নিয়েই রয়ে গেল প্রশ্ন দ্বিতীয় ম্যাচেও কি 'পরীক্ষাগার' বানানো হবে বাংলাদেশ দলকে? হত্যাকাণ্ড ও নৈরাজ্যে জড়িতদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে: তারেক রহমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত থামবো না: আহসান খান পুরান ঢাকার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিচারহীনতার প্রতিচ্ছবি ও রাজনীতির সংকট বিশ্বরেকর্ড গড়ল জাপান, ১ সেকেন্ডে ডাউনলোড করা যাবে সব ভিডিও চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হন সোহাগ: পুলিশ সরকার মব জাস্টিস বরদাশত করে না: রিজওয়ানা হাসান রাজসাক্ষী হিসেবে সহায়তার শর্তে চৌধুরী মামুনকে ক্ষমা: ট্রাইব্যুনাল সারা দেশে আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা তৈরি হচ্ছে: আইজিপি
  • পুরান ঢাকার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিচারহীনতার প্রতিচ্ছবি ও রাজনীতির সংকট

    পুরান ঢাকার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিচারহীনতার প্রতিচ্ছবি ও রাজনীতির সংকট
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এটি এ দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পুলিশি আচরণ এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ব্যর্থতার নগ্ন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জনমনে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে, তা একেবারে যৌক্তিক। কারণ, যাদের ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিতে, তারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

    জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে, তা শুধু একটি রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্বেগ নয়, বরং দেশের সাধারণ মানুষের মনের কথারই প্রতিফলন। এই ঘটনায় মামলার বাদী নিজেই গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, মূল তিন খুনিকে বাদ দিয়ে নিরাপরাধ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কারা, কী উদ্দেশ্যে, কাদের রক্ষা করতে গিয়ে এই রহস্যজনক অপচেষ্টা চালাচ্ছে?

    এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, হত্যাকাণ্ডের ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর তদন্ত হয়নি, গ্রেফতার হয়নি মূল অপরাধীরা। এমনকি মামলার এজাহার থেকে ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান হামলাকারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতা, না কি কারো বিশেষ ‘পৃষ্ঠপোষকতায়’ এসব খুনিরা আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে?

    বিএনপির তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব সদস্যদের নাম আসামিদের তালিকায় এসেছে, তাদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, বিএনপি এবং তার অঙ্গ-সংগঠনগুলো নৃশংসতার পক্ষে নয়, বরং শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগ ব্যবস্থার পক্ষে। সাংগঠনিক জবাবদিহিতার এমন দৃষ্টান্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি দলটির দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীল অবস্থানকে নির্দেশ করে।

    এমন এক সময় এই বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটল, যখন দেশে রাজনৈতিকভাবে একটি অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে, একটি ‘বিশেষ গোষ্ঠী’ চায় দেশে অরাজকতা তৈরি হোক, যাতে করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এই ঘটনার তদন্তে গাফিলতি কিংবা মামলায় আসল খুনিদের বাদ দেওয়া হলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে যে, একটি বিশেষ মহল সচেতনভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা বাড়াতে চাইছে, আর প্রশাসন তাতে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে।

    সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি এ ঘটনার প্রতি উদাসীন থাকে, তাহলে মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচারের বিশ্বাস আরও দুর্বল হবে। এটি দেশের জন্য ভয়ানক বার্তা বহন করবে, যেখানে একজন রাজনৈতিক কর্মী বা সাধারণ নাগরিকও প্রকাশ্যে খুন হয়ে যেতে পারে, অথচ খুনিরা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

    আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, অবিলম্বে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা এই জঘন্য অপরাধের ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত, তাদের গ্রেফতার করতে হবে, মামলার এজাহার সংশোধন করে প্রকৃত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালিত করতে হবে। অন্যথায়, এই হত্যাকাণ্ডও হয়তো বিচারহীনতার গহ্বরে হারিয়ে যাবে, যেমন বহু হত্যা, গুম ও নির্যাতন বিগত বছরগুলোতে আড়াল হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে সহিংসতা ও বিচারহীনতা থেকে মুক্ত করতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

    এই হত্যাকাণ্ডে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো শুধু বিএনপির নয়, সার্বিকভাবে প্রতিটি নাগরিক, প্রতিটি বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ