বিশ্বরেকর্ড গড়ল জাপান, ১ সেকেন্ডে ডাউনলোড করা যাবে সব ভিডিও


ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি দেখিয়েছে জাপান। দেশটির বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ তৈরিতে সফল হয়েছেন। তাদের গবেষণায় অর্জিত নতুন ইন্টারনেট গতি হলো প্রতি সেকেন্ডে ১.০২ পেটাবাইট—যা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক।
এই গতিতে মাত্র এক সেকেন্ডেই সম্পূর্ণ মিউজিক, মুভি এবং গেম লাইব্রেরি ডাউনলোড করা সম্ভব বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস।
গবেষকদের দাবি, এটি শুধু গতি নয়, বরং ভবিষ্যতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং মহাকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
এই প্রযুক্তির পেছনে রয়েছে উন্নত অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি এবং মাল্টিচ্যানেল ডেটা ট্রান্সমিশনের সমন্বয়। যদিও এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এর বাণিজ্যিক ব্যবহারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
গত জুন মাসে জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (এনআইসিটি) এই রেকর্ড তৈরি করে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১০ লক্ষ ২০ হাজার গিগাবাইট ডেটা স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিদ্যমান ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই অগ্রগতি বিশ্বজুড়ে মানুষের ডেটা স্থানান্তরের পদ্ধতি, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করার পদ্ধতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারে।
গত মাসে জাপান এই ভবিষ্যৎ দেখিয়েছে। আবিষ্কার অনুযায়ী, অ্যাপটি চালু করতে যত দ্রুত লাগে তার চেয়ে দ্রুত নেটফ্লিক্সের সমস্ত কন্টেন্ট ডাউনলোড করতে সক্ষম হবেন একজন গ্রাহক এবং এটি খুব দ্রুত উন্মুক্ত হতে চলেছে।
জাপান কীভাবে এটি অর্জন করেছে?
এটি কোনো পরীক্ষাগারের খেলা নয়। এনআইসিটি সাধারণ মাপের ফাইবার অপটিক তার ব্যবহার করেছে, যা সারা বিশ্বেই ব্যবহৃত হয়। তবে এর ভেতরে চারটি কোর এবং পঞ্চাশের বেশি আলাদা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, তারা এই গতি ৫১ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে ধরে রাখতে পেরেছে, যা বাস্তবে ব্যবহার উপযোগী।
এই ইন্টারনেট গতি কী করতে পারে?
এই গতি উন্মুক্ত হলে গ্লোবাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, রিয়েল-টাইম অনুবাদের মতো ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ডেটা স্থানান্তর সম্ভব। মুহূর্তের মধ্যে স্টিমের সব গেম নামিয়ে ফেলা যাবে। কাউন্টার-স্ট্রাইক ২ থেকে বালদুর’স গেট ৩ পর্যন্ত সব গেম দশ সেকেন্ডেরও কম সময়ে নামানো সম্ভব হবে।
এই গতি দিয়ে একসঙ্গে এক মিলিয়ন ৮কে আল্ট্রা-এইচডি ভিডিও স্ট্রিমিং করা সম্ভব। এর মাধ্যমে টোকিও ও নিউইয়র্কের প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে এইচডি মুভি দেখানো সম্ভব হবে। এছাড়া এক সেকেন্ডে এক লাখ ২৭ হাজার ৫০০ বছরের সমান গান ডাউনলোড করা যাবে এবং উইকিপিডিয়ার সব তথ্য এক সেকেন্ডে ১০জার বার ব্যাকআপ নেওয়া যাবে।
বাড়িতেও কি পাওয়া যাবে এই সেবা?
দুর্ভাগ্যবশত, এখনই নয়। গ্রাহক পর্যায়ে এখনো টেরাবাইট গতির ইন্টারনেট আসেনি। তবে সরকার, ডেটা সেন্টার এবং টেলিকম সংস্থাগুলো এই গতিকে তাদের নেটওয়ার্কে আনার চেষ্টা করছে। জাপানের এই সাফল্য শীঘ্রই সমুদ্রের নীচের কেবল এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
