রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে কোনো সিদ্ধান্ত নয়, কোচ-প্রস্তুতি নিয়েই রয়ে গেল প্রশ্ন দ্বিতীয় ম্যাচেও কি 'পরীক্ষাগার' বানানো হবে বাংলাদেশ দলকে? হত্যাকাণ্ড ও নৈরাজ্যে জড়িতদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে: তারেক রহমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত থামবো না: আহসান খান পুরান ঢাকার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিচারহীনতার প্রতিচ্ছবি ও রাজনীতির সংকট বিশ্বরেকর্ড গড়ল জাপান, ১ সেকেন্ডে ডাউনলোড করা যাবে সব ভিডিও চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হন সোহাগ: পুলিশ সরকার মব জাস্টিস বরদাশত করে না: রিজওয়ানা হাসান রাজসাক্ষী হিসেবে সহায়তার শর্তে চৌধুরী মামুনকে ক্ষমা: ট্রাইব্যুনাল সারা দেশে আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা তৈরি হচ্ছে: আইজিপি
  • শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিও ও গণতন্ত্রের চরম পরীক্ষা

    শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিও ও গণতন্ত্রের চরম পরীক্ষা
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে কয়টি ঘটনা গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে, সাম্প্রতিক ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিং তার অন্যতম হয়ে উঠেছে। বিবিসি যাচাই করা এই রেকর্ডিংয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্পষ্টভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে শোনা গেছে, যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণআন্দোলন চলাকালে দেওয়া হয়েছিল।

    এই অডিওর বিশ্লেষণ এবং সত্যতা নিরূপণে ব্রিটিশ অলাভজনক সংস্থা ইয়ারশট এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), উভয়েই নিশ্চিত করেছেন যে রেকর্ডিংয়ে কোনো ধরনের সম্পাদনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি কণ্ঠস্বর, শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা একমত হয়েছেন এটি শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর বলেই প্রতীয়মান হয়। এতে সন্দেহ নেই যে, এই অডিও একটি রাজনৈতিক জলবিভাজিকার সৃষ্টি করেছে।

    একজন রাষ্ট্রনায়ক যখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নিজ দেশের নাগরিকদের উপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন, তখন সেটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। সরকার এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের সেবায় ব্যবহৃত হওয়ার কথা; জনগণের দমন-পীড়নে নয়।

    গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার দায় রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ—একটি রাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করে দেয়। ফাঁস হওয়া অডিওটি, যদি সত্য হয়, তবে তা এক ভয়ানক রাজনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতার দলিল হিসেবেই গণ্য হবে।

    এই অডিও প্রকাশের পর যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া একান্ত জরুরি। কেবল রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, স্বতন্ত্র, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। শেখ হাসিনা নিজে এবং তাঁর আমলের সরকার যদি মনে করেন এটি একটি ‘বেআইনি বা মনগড়া রেকর্ডিং’, তাহলে তা নিরপেক্ষভাবে খণ্ডন করার সুযোগ তাঁদেরও থাকা উচিত।

    অপরদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই অডিও যদি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এর ভিত্তিতে দায় নির্ধারণের কাজ শুরু করা উচিত।

    বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, বারবার গণতন্ত্রকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এই অডিও যদি সত্য হয়, তবে সেটিও হবে এমনই একটি অধ্যায়ের বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি। শুধু শেখ হাসিনা নন, যেসব কর্মকর্তারা এই আদেশ কার্যকর করেছেন কিংবা প্রশ্রয় দিয়েছেন, তাঁদের দায়ও অস্বীকার করা যায় না।

    গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য নির্ভর করে তার প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। জনগণের কণ্ঠ রোধে, হত্যা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কখনোই স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা যায় না, ইতিহাস বারবার সেটিই প্রমাণ করেছে।


    এই অডিও রেকর্ডিং কেবল একটি কণ্ঠস্বর নয়, এটি একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর চাপা পড়ে থাকা প্রশ্নের বিস্ফোরণ। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশ একটি কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করানো, আমরা কি একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই, নাকি একটি ভয়ভীতিপ্রসূত শাসনব্যবস্থা মেনে নেব?

    যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক, এই রেকর্ডিং ইতিহাসে একটি মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, শর্ত একটাই, যদি দেশ সঠিকভাবে এর মোকাবিলা করতে পারে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ