প্রকৃতির মায়ায় পাহাড়ি চিংড়ি ঝরনা


বান্দরবান মানেই পাহাড়, সবুজ আর ঝরনা। এই ঝরনাই যেন রিনিঝিনি ছন্দময়, আনন্দময় আবহ নিয়ে ঘিরে ধরে শরীর ও মন। তেমনই এক জলপ্রপাতের নাম চিংড়ি ঝরনা। এটি মূলত একটি উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা স্রোতস্বিনী জলপ্রপাত। বর্ষার সময়ে এর জলধারা আরও বেগবান ও রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। চারপাশে ঘন জঙ্গল, বুনো গাছপালা, নানা প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি একে করে তোলে আনন্দময়। পাহাড়ি নির্জনতায় এ ঝরনা যেন এক অদ্ভুত মায়ায় মোড়ানো।
চিংড়ি ঝরনার নামকরণ নিয়ে আছে ভিন্নমত। কেউ বলেন, একসময় এখানে প্রচুর চিংড়ি মাছ পাওয়া যেত বলেই এমন নাম। আবার অনেকে মনে করেন, ঝরনার নিচে জমে থাকা পাথরের গঠন অনেকটা চিংড়ির মতো দেখতে। তবে যা-ই হোক না কেন, ‘চিংড়ি ঝরনা’ এখন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার নাম।
চিংড়ি ঝরনার অবস্থান বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায়। রুমা বাজার থেকে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে, বগা লেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে এটি অবস্থিত। বগা লেক থেকে প্রায় ৩০-৪৫ মিনিটের একটি পাহাড়ি ট্রেকিং পথ পেরোলেই ঝরনার দেখা মেলে। নিচ থেকে ঝরনার ছোট একটি অংশ দেখা গেলেও মূল ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে হলে পিচ্ছিল পাথর বেয়ে ডানদিকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে উঠতে হয়।
চিংড়ি ঝরনা দেখতে গেলে বগা লেকে এক রাত না থেকে ফিরে যাওয়া যেন অপূর্ণ ভ্রমণ। সাধারণত পর্যটকেরা কেওক্রাডং কিংবা বগা লেক ঘুরতে গিয়েই ঝরনাটি দেখে নেন অতিরিক্ত আকর্ষণ হিসেবে। লেকের পাশে আদিবাসীদের কিছু কটেজে রাত কাটানো যায়, যেগুলোর ভাড়া সুলভ। এক কটেজে ৫-৬ জন পর্যন্ত থাকতে পারেন। কাপল বা নারী পর্যটকদের জন্য আলাদা কটেজের ব্যবস্থা আছে। গাইডের মাধ্যমে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা উত্তম।
রুমা বাজারে কিছু হোটেল থাকলেও বগা লেকে খাওয়ার ব্যবস্থা মূলত আদিবাসীদের ঘরেই করতে হয়। সাধারণত ১০০-২০০ টাকায় ভাত, ডিম, আলুভর্তা ও পাহাড়ি মুরগি দিয়ে প্যাকেজ খাবার পাওয়া যায়। আগে থেকে জানিয়ে রাখলে রান্না প্রস্তুত থাকে। চাইলে লেকপাড়ে বসে পাহাড়ি মুরগির বারবিকিউ উপভোগ করতে পারেন।
এখানে যেতে চাইলে দেশের যেখানেই থাকুন না কেন, প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান। ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাস সার্ভিসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বাসের ধরন ও সিটের মান অনুযায়ী নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০-৯৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সময় লাগে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।
বান্দরবান পৌঁছে চান্দের গাড়ি বা জিপে করে যেতে হবে রুমা বাজার। সেখান থেকে গাইড নিয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে আবার চান্দের গাড়ি বা লোকাল গাড়িতে যেতে হবে বগা লেক। বগা লেকে পৌঁছে ঘোরার পর যদি সময় থাকে, তাহলে সেদিনই সেনা ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে চিংড়ি ঝরনার পথে হাঁটা শুরু করা যায়। তবে নিরাপত্তা ও স্বস্তির জন্য পরদিন সকালে রওয়ানা দেওয়াই ভালো।
বর্ষাকালে চিংড়ি ঝরনা ভ্রমণে সতর্কতা জরুরি। বর্ষাকালে জলপ্রবাহ প্রচণ্ড হলেও নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে নিন, বর্ষায় ঝরনার পথ উন্মুক্ত আছে কি না। ঝরনার নিচে হাঁটার সময় পিচ্ছিল পাথরে সাবধানে চলুন, গোসলের সময় সতর্ক থাকুন। আদিবাসীদের ছবি তুলতে চাইলে অবশ্যই অনুমতি নিন, তাদের প্রতি সম্মান বজায় রাখুন।
ভ্রমণে সাথে রাখুন পাওয়ার ব্যাংক, হাইকিং জুতা, পলিথিন, পানি, শুকনো খাবার, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ইত্যাদি। যারা কম খরচে এখানে ভ্রমণ করতে চান; তারা বিভিন্ন ট্যুর গাইডের মাধ্যমে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিন দিনের খরচ পড়বে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। ট্যুর গ্রুপ ভেদে খরচে কিছুটা তারতাম্য হতে পারে।
দৈএনকে/ জে. আ
