ডাচ্-বাংলা ব্যাংক: পরিবারিক স্বার্থে বিতর্কিত ভবন কেনাবেচা


ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংক, সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ের জন্য মতিঝিলে কেনা বা ভাড়া নেওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে এই ব্যাংকটিকে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান সাদিয়া রাইন আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন ভবনটি ব্যাংক কিনতে যাচ্ছে।
ভবনের প্রকৃত মালিক ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আছমা আহমেদ। পাঁচ বছর ধরে ব্যাংক এই ভবন ভাড়া নিয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকের পর্ষদ এক হাজার ১৬ কোটি টাকা খরচ করে ভবনটি কিনতে সম্মত হয়েছে, যা বিশ্লেষকদের মতে বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। কোম্পানি আইন ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ আইন অনুযায়ী পরিচালকের মালিকানাধীন সম্পত্তি ব্যাংক ক্রয়ে ব্যবহার করা স্বার্থবিরোধ সৃষ্টি করে এবং এটি বিতর্কিত।
সাহাবুদ্দিন আহমেদ বর্তমানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান না হলেও কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছেন। এর আগে তার ছেলে সায়েম আহমেদ ছিলেন চেয়ারম্যান। বর্তমানে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সাদিয়া রাইন আহমেদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুনাফা ৪৭৩ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৪১ শতাংশ কম, এবং খেলাপি ঋণের হার ৭.৭ শতাংশ। ব্যাংক প্রতি মাসে আছমা আহমেদের মালিকানাধীন ভবনের ভাড়া বাবদ প্রায় ২.৪৭ কোটি টাকা ব্যয় করছে, যা গত পাঁচ বছরে ১৪০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথের সংখ্যা ২০২০ সালে ৪,৮৬২ ছিল, যা ২০২৪ সালে ৪,১৫১-এ নেমে এসেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মতিঝিলের মতো প্রাইম লোকেশনে এই ভবন নির্মাণ খরচ সর্বোচ্চ ২৫০–৩০০ কোটি টাকায় সম্ভব। কিন্তু ব্যাংক এটি কিনতে যাচ্ছেন প্রায় ১,০১৬ কোটি টাকায়। সাবেক এক অর্থনীতিবিদ বলেন, কোনো ব্যাংক তার পরিচালকের মালিকানাধীন ভবন কিনতে পারে না। এটি স্বার্থবিরোধ সৃষ্টি করে এবং সাধারণ আমানতকারীর ক্ষতি হতে পারে।
ব্যাংক ভবন কিনতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজারমূল্য যাচাইয়ের পর অনুমোদন দেওয়া হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ও তদারকির বাইরে থাকলে ব্যাংক, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীর স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ভবন কেনাবেচা বিতর্কিত। পরিবারিক স্বার্থ, স্বার্থবিরোধ এবং উচ্চমূল্যের লেনদেন এখানে স্পষ্ট। বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি অপরিহার্য।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি বা সংশ্লিষ্ট কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
ব্যাংকটির আরও নানামুখী অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডির স্বেচ্ছাচারিতা এবং পরিবারকেন্দ্রিক নীতি নিয়ে আমরা কয়েকটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবো।
