মহাখালীতে চাঁদাবাজির জেরে গুলিবর্ষণ, কে এই সন্ত্রাসী?


রাজধানীর মহাখালীতে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির জেরে এক সন্ত্রাসীর গুলিবর্ষণের ঘটনায় এলাকা জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আলোচনা করছে মহাখালীর ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা আবার ফিরে এসেছে। তারা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রায়ই অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে মহাখালী ওয়্যারলেস গেইটে বৈশাখী টেলিভিশনের পাশের গলিতে এক অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় একজন হেলমেট পড়ে তিন-চার রাউন্ড গুলি করে চলে যায়। ওই ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, এই গুলি বর্ষণের পেছনে মূল কারণ চাঁদাবাজি। কিছুদিন আগে বৈশাখী টেলিভিশনের কিছু পুরাতন মালামাল দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি হয়। টেন্ডারে সেই মালামাল যেই প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেছে তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছিল কয়েকটি পক্ষ। ওই রাতে ক্রয় করা মালামাল ট্রাকে লোডিং করা হচ্ছিল। সেই সময়ে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলি বর্ষণের ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় ঘটনা স্থলে বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু তার দলবল নিয়ে হাজির হন। পরবর্তীতে ট্রাকে মালামাল লোড করে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মিশুকে তার সংগঠনের প্রায় শতাধিক কর্মীকে নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হেলমেট পড়ে গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীর পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তার নাম আব্দুর রহমান মাসুম ওরফে মোল্লা মাসুম। সে মহাখালী, বাড্ডা গুলশান, বনানী, এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মধ্যে হলেও তার বাবার চাকরির সুবাদে তারা মহাখালী ওয়্যারলেস গেইটে বিটিসিএল কলোনিতে থাকতো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অল্প বয়স থেকেই মাসুম বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে বনানী, গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও থানায় চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। বাবার চাকরির অবসর জনিত কারণে মাসুমদের মহাখালী বিটিসিএল কলোনি ছাড়তে হয়। এরপর থেকে তারা টঙ্গীতে বসবাস শুরু করে।
সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুম দীর্ঘদিন পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে ছিল। ৫ই আগস্টের পর সে ফিরে এসে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। কড়াইল বস্তির এক অংশের চাঁদাবাজি এখন তার দখলে। নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বনানী থানা এলাকার মাদক ব্যবসাতেও। এছাড়া বিটিসিএল কলোনির একটি পরিত্যক্ত ভবন দখল করে সেটিকে তার অবৈধ কার্যকলাপের গোপন আস্তানা বানায়। গত শুক্রবার সেই আস্তানায় অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক সেবনের বিপুল আলামত। তবে মাসুমকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সে আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায় এবং মাদকদ্রব্য সরিয়ে ফেলে।
গুলি বর্ষণের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, গুলি বর্ষণের সময় মোল্লা মাসুমের আশেপাশে পথচারীর বেশে তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠরাও ছিল। তারা মাসুমের সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। ঘটনা হিতে বিপরীত হলে মাসুমকে সেফ এক্সিট করানোর জন্য পথচারী বেশে আশেপাশে ছিল ঘনিষ্ঠরা। এছাড়া মাসুমের আগে তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠদের হেঁটে যেতে দেখা যায়। তারা সামনের পরিস্থিতি সুবিধাজনক বুঝে ইশারায় গ্রীন সিগন্যাল দেওয়ার পরেই মাসুম অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়।
কয়েক মাস আগে ওয়্যারলেস গেইটে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে কলম্বিয়া সুপার মার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী জয় প্রসাধনীর স্বত্বাধিকারী স্বপন রয়কে মব সৃষ্টি করে পিটিয়ে জখম করেন মোল্লা মাসুম ও তার বাহিনী।
গত মাসে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ২০ নং ওয়ার্ডের পরিছন্নতা সুপারভাইজার মো. লাবুকে আটকে রেখে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে মোল্লা মাসুম।
মাসুমের মতো ভয়ংকর সন্ত্রাসীকে নিয়ে মহাখালীর সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। সেদিন তার করা ফাঁকা গুলি যদি সাধারণ পথচারী কারো শরীরে লাগতো! এমন ভয় বিরাজ করছে অনেকের মধ্যে। বড় অঘটন ঘটার আগেই এরকম ভয়ঙ্কর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
এ বিষয়ে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারোয়ার বলেন, গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
