মাটিতে বসবাসকারী Cupriavidus metallidurans


সোনার ডিম পাড়া হাঁসের গল্প নিশ্চয় শুনেছেন। মাটিতে বসবাসকারী Cupriavidus metallidurans নামের দণ্ডাকৃতি ক্ষুদ্র এক ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো অদ্ভুত ক্ষমতায়। এটা মাটিতে থাকা বিষাক্ত ধাতু বিশেষ করে তামা ও সোনার বিষাক্ত রূপকে নিষ্ক্রিয় কঠিন সোনায় পরিণত করে। আর তাতে ক্ষুদ্র সোনার দানা তৈরি হয়। এই কাজের নেপথ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম— CupA ও CopA কাজ করে।
CupA সাধারণত অতিরিক্ত তামা কোষ থেকে সরিয়ে পেরিপ্লাজম নামের ফাঁকা জায়গায় জমা করে, যাতে বিষাক্ত প্রভাব কমে। কারণ, সামান্য তামা দরকার হলেও বেশি তামা ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষ।
কিন্তু ঝামেলা বাধে যখন সোনার আয়ন হাজির হয়। এখানে আয়ন হলো সোনার সেই রূপ, যেখানে এক বা একাধিক ইলেকট্রন হারিয়েছে, ফলে তৈরি হয় অস্থিতিশীল অবস্থা। সোনার আয়ন CupA কে কার্যত অচল করে দেয়। তখন তামাও আটকে যায় ভেতরে, সোনাও জমতে থাকে—দুটোই মারাত্মক।
তখন সক্রিয় হয় CopA, যা তামা ও সোনার আয়ন থেকে ইলেকট্রন সরিয়ে তাদের স্থিতিশীল ধাতব কণায় রূপান্তর করে। তখন এই ক্ষুদ্র সোনার কণাগুলি পেরিপ্লাজমে জমা হয়, যেখানে তারা আর ক্ষতিকর নয়। সময় হলে ব্যাকটেরিয়ার বাইরের ঝিল্লি ফেটে যায়, আর বেরিয়ে আসে সেই সোনার দানা। এভাবেই ব্যাকটেরিয়াটি বেঁচে থাকতে গিয়ে প্রকৃত অর্থেই সোনা সৃষ্টি করে!
বর্তমানে সোনা আহরণে পারদের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য সমান ক্ষতিকর। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার এই প্রক্রিয়াটা মানুষ যদি নকল করতে পারে, তাহলে খুব কম সোনা থাকা আকরিক থেকেও পরিবেশবান্ধব উপায়ে সোনা তোলা যাবে।
নাছরিন আক্তার তারিন
লেখক, বিজ্ঞান্বেষী
দৈএনকে/ জে .আ
