সরকার পতনের পর থেকেই কুবিতে বন্ধ বাস্কেটবল ও কেন্দ্রীয় মাঠের গ্যালারি নির্মাণ


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বাস্কেটবল মাঠ ও কেন্দ্রীয় মাঠের গ্যালারি নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে একবছর যাবৎ। ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তরের সময়সীমা থাকলেও গত বছরের ০৫ আগস্ট সরকার পতনের পার থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে বাস্কেটবল মাঠ ও স্পোর্টস গ্যালারি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের চারপাশে ছয়টি গ্যালারি নির্মাণ এবং নতুন শিক্ষক ডর্মেটরির পাশে বাস্কেটবল মাঠ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাস্কেটবল মাঠে শুধু গ্রাউন্ড এবং দুইপাশে দুইটি খুঁটি বসানো হয়েছে। টানানো হয়নি নেট, করা হয়নি কোর্ট। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বাস্কেটবলের সেই মাঠে এখন খেলে শটপিচ ক্রিকেট। এছাড়া, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ছয়টি গ্যালারির মধ্যে করা হয়েছে মাত্র দুইটি। আবার দুইটির ছাউনিতে দেওয়া কাচ ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে।
প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ এবং বাস্কেটবল মাঠের কাজ হয়েছে ৭১ শতাংশ।
জানা যায়, এই প্রকল্পটির জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭১৯ টাকা। যার মধ্যে ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৯ টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
এবিষয়ে উক্ত প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, 'এগুলো যেহেতু রাজস্ব খাতের কাজ, সেহেতু জুন মাসের মধ্যে যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে কাজ বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী আবার শুরু করা হয়। তারা তাদের অসচেতনতার কারণে জুন মাসের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি। তাই তাদের জরিমানা করে আমরা যতটুকু কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে তার টাকা পরিশোধ করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি ছিল না। আমরা তাদের কাজের অগ্রগতির জন্য চিঠি দিয়েছি। মূলত তাদের অসহযোগিতার কারণেই কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী চাহিদা আসছে, তখন আবার কাজ শুরু হবে।'
গত ১৯ মে 'ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং' বরাবর একটি চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়।
এবিষয়ে ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মকর্তা মুশফিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারেননি। পরবর্তীতে ফোনকল কেটে দেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে খেলা প্রেমী শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দিলোয়ার হোসেন বলেন, 'একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সেন্ট্রাল ফিল্ডে ৬টি গ্যালারি ও বাস্কেটবল মাঠের কাজ এক বছরেও শুরু হয়নি। এই অবহেলা আমাদের খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া উন্নয়ন আর শুধু প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ থাকা চলবে না। আমরা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল খেলোয়াড় ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাজুল ইসলাম বলেন, 'একজন স্পোর্টস পছন্দ করা মানুষ হিসাবে আমি সবসময় চাই বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় খেলাধুলার আমেজ থাকুক। এটা দেখতে অনেক ভালো লাগে। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠগুলোও আরও সুন্দর হোক এটা আমাদের সবার চাওয়া। আমাদের একটা বাস্কেটবল মাঠের কাজ অর্ধেক শেষ হয়ে পড়ে আছে, অন্য দিকে সেন্ট্রাল ফিল্ডে অনেক গুলো গ্যালারী হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি। এইগুলো খুবই দুঃখজনক।'
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, 'এই কাজগুলোর প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে। এটার জন্য কত টাকা বরাদ্দ লাগবে, তা দেখা হচ্ছে। যেহেতু এটি মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাই যতটুকু কাজ বাকি আছে, সেটার জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করে আমরা প্রকৌশল দপ্তরে পাঠানোসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তারপর দরপত্র দেওয়া হবে।'
ক্রীড়া পরিচালনা কমিটি আহবায়ক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, 'আমরা প্রশাসনকে শারীরিক শিক্ষা বিভাগ থেকে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছি অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য। বলেছি যেহেতু এই বাস্কেটবল মাঠটি অসম্পূর্ণ, তাই আমরা বাস্কেটবল খেলা শুরু করতে পারছি না।'
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, 'তারা (ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং) আমাদের কাছে এসেছিল বিল পাশের জন্য। আমি বলেছি, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা সম্ভব নয়।'
প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমি অবগত নই।'
