গরমে দগ্ধ ইউরোপ, মাত্র ১০ দিনে ১২ শহরে মৃত্যু ২,৩০০


চলতি গ্রীষ্মে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব যেন বাস্তবেই ধরা দিয়েছে ইউরোপজুড়ে। রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহ আর অস্বাভাবিক গরমে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ১২টি শহরে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২,৩০০ মানুষ।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই মৃত্যুর বেশিরভাগই সরাসরি তাপপ্রবাহের ফলে ঘটেছে। বাকি যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তারা আগে থেকেই ছিলেন নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা নিছক একটি মৌসুমি সমস্যা নয়—বরং জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা কতটা ঘনিয়ে এসেছে, তারই এক জাগ্রত উদাহরণ। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন—শুধু তাপ নয়, এর সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি, দমবন্ধ করা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ পরিস্থিতিকে করে তুলছে আরও উদ্বেগজনক।
লন্ডনভিত্তিক ইম্পেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক গবেষণায় জানা গেছে, গত ২২ জুন থেকে ২ জুলাই ২০২৫— এই ১০ দিনে ইউরোপের বার্সেলোনা, মাদ্রিদ, লন্ডন, মিলানসহ ১২টি প্রধান শহরে গরমজনিত কারণে কমপক্ষে ২,৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার (৮ জুলাই)। গবেষকদের মতে, সরাসরি দাবদাহের কারণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১,৫০০ জনের। বাকিরা আগে থেকেই নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু তীব্র তাপ তাঁদের মৃত্যুর অনুঘটক হয়েছে। গবেষণার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা।
গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। শীতল জলবায়ুর জন্য পরিচিত ইউরোপে সেই সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বা আরও বেশি। ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক ড. বেন ক্লার্ক বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপ অনেক বেশি গরম হয়ে উঠেছে। এবারের গ্রীষ্ম যেন বিপদ ডেকে এনেছে।” তিনি আরও জানান, “আমাদের গবেষণায় শুধু ১২টি শহরের তথ্য রয়েছে। পুরো ইউরোপজুড়ে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।”
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ক্লার্ক বলেন, “এই তাপমাত্রা শুধু সংখ্যায় নয়, এর মানবিক মূল্য অনেক বেশি। অনেক অসুস্থ মানুষ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন।” তিনি জানান, অতিরিক্ত গরম বৃদ্ধির জন্য মূলত দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। এই বিপদের মাত্রা বাড়তে থাকলে সামনে আরও প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, ইউরোপের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেইঞ্জ সার্ভিস বুধবার তাদের মাসিক বুলেটিনে জানায়, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের মতো ২০২৫ সালেও জুন মাস ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম জুন। সংস্থার স্ট্র্যাটেজিক প্রধান সামান্থা বার্গেস বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব দ্রুত হারে গরম হয়ে যাচ্ছে। এই ধারা যদি চলতে থাকে, তাহলে ইউরোপে আরও ঘন ঘন দাবদাহ দেখা যাবে এবং বিপরীতে প্রাণহানি বাড়তেই থাকবে।”
