ইসরায়েলে ঘাঁটি সম্প্রসারণ, অস্ত্র মজুত বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র


মধ্যপ্রাচ্যে নিজের সামরিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে কার্যক্রম জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইসরায়েলে তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলোর অবকাঠামো সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে অস্ত্রের মজুতও।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মিডল ইস্ট আই–এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন বর্তমানে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ চালাচ্ছে। এতে যুক্ত করা হচ্ছে উন্নত সরঞ্জাম, সুরক্ষিত ভবন এবং গোলাবারুদের আধুনিক সংরক্ষণব্যবস্থা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রস্তুতিরই অংশ, যার লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়াশীল সক্ষমতা আরও বাড়ানো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে ব্যাপক সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বিমানঘাঁটি, গোলাবারুদের গুদাম এবং অন্যান্য সামরিক স্থাপনা রয়েছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় বর্তমানে ২৫ কোটিরও মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে এ ব্যয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সরকারি নথির বরাত দিয়ে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, এসব অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ আগ্রহী ঠিকাদারদের আহ্বান জানায়। এই উদ্যোগ জুনে শুরু করার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
প্রকল্পগুলোর আওতায় পুরোনো বিমানঘাঁটিগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের জন্য হ্যাঙ্গার, জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্র, মেরামতের ঘর এবং গোলাবারুদের গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পে যুদ্ধবিমানের জন্য হ্যাঙ্গার ও মালপত্র রাখার ঘর তৈরিতে ১০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে। অন্যদিকে হেলিকপ্টার ঘাঁটি নির্মাণে ব্যয় হতে পারে প্রায় ২৫ কোটি ডলার।
আরও একটি প্রকল্পে গোলাবারুদ সংরক্ষণের জন্য ১০ কোটি ডলারের গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে সাত বছরের জন্য নির্মাণ, মেরামত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি ডলার পর্যন্ত। প্রকল্পগুলোর অবস্থান প্রকাশ করা না হলেও জানা গেছে, সেগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই অর্থের বড় অংশ আসছে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সামরিক সহায়তা তহবিল থেকে। এই তহবিলের আওতায় ইসরায়েল প্রতিবছর প্রায় ৩৮০ কোটি ডলার পেয়ে থাকে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ সিদ্ধান্তে ব্যয় করা হয় এবং মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঠিকাদারদের মধ্যেই বিতরণ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অতিরিক্তভাবে আরও প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার সামরিক সহায়তা পায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্র পূর্বেও ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। ২০১২ সালে একটি বিমানঘাঁটিতে তারা ‘৯১১ নম্বর স্থাপনা’ নামে একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সাম্প্রতিক ১২ দিনের ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। তবে বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা এই যুদ্ধের আগেই গ্রহণ করা হয়েছিল।
