অব্যবস্থাপনার ফলে সংকটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
.jpg)

দেশের পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও নানা সমস্যায় জর্জরিত। একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় এয়ারলাইন্স হিসেবে পরিচিত বিমান আজ নানা সংকটে হোঁচট খাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ত্রুটি, আর্থিক ক্ষতি, রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতা ও সেবার মান অবনতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রী আস্থা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
১. ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের রেকর্ড
বিগত কয়েক বছরে বিমানের ফ্লাইট বিলম্বের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে নির্ধারিত সময়ের তুলনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ার ঘটনা নিয়মিত। এর ফলে যাত্রীরা বিদেশে কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করা ও ব্যবসায়িক ক্ষতির মতো সমস্যার মুখে পড়েন।
২. যান্ত্রিক ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা
বিমানের বহরে বেশ কিছু পুরনো বিমান রয়েছে যেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি দেখা যায়। এর ফলে মাঝপথে ফ্লাইট বাতিল বা উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক সমস্যার ঘটনা ঘটছে। বিমান প্রকৌশলীদের ঘাটতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে পড়াও বড় কারণ।
৩. অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়ম
সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বহুদিনের অভিযোগ। বিভিন্ন ক্রয় চুক্তি ও বিমান লিজ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
৪. আর্থিক ক্ষতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনা
বছরের পর বছর লোকসানে চলা বিমানের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে। ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, অপারেশনাল দক্ষতার অভাব ও অপ্রয়োজনীয় রুট চালুর ফলে লোকসানের বোঝা বেড়েছে।
৫. যাত্রীসেবা অবনতির অভিযোগ
যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, বিমানের অনবোর্ড সার্ভিস, কাস্টমার কেয়ার ও অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানের থেকে অনেক পিছিয়ে। লাগেজ হারানো, সময়মতো খাবার সরবরাহ না করা এবং কর্মীদের আচরণ নিয়ে অসন্তোষ বেড়েছে।
৬. আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারানো
প্রতিদ্বন্দ্বী বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো উন্নত সেবা ও সময়ানুবর্তিতার কারণে যাত্রী টানছে। অথচ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজেদের শক্তিশালী মার্কেট পজিশন ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
৭. পুনর্গঠন ও সংস্কারের দাবি
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে জরুরি ভিত্তিতে রুট রেশনালাইজেশন, দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বিনিয়োগ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতের উন্নয়ন অপরিহার্য। একইসঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও পেশাদার নেতৃত্ব নিশ্চিত না করলে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা কঠিন হবে।
