বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • সরকারের নীতি ও অস্বচ্ছ সিদ্ধান্তে ওষুধ শিল্পে সংকট: মির্জা ফখরুল মালয়েশিয়া সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা গোপালগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সুজন সিকদার গ্রেপ্তার বিএনপি ক্ষমতায় এলে পুলিশ হত্যা মামলায় ফাঁসানো হতে পারে আনিসুলদের মামলা প্রত্যাহার, জিএম কাদেরের কার্যক্রমে আর বাধা নেই ৫ দফা দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এক মাসের আলটিমেটাম সরকারকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহারে ঢাকা-উত্তরাঞ্চল রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক যতীন সরকার আর নেই ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: অর্থ উপদেষ্টা তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর: খোলা হলো ৪৪ গেইট
  • আনোয়ার জাহিদ মেধাভিত্তিক রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

    আনোয়ার জাহিদ মেধাভিত্তিক রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    দেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ইতিহাসে এক আপোষহীন নেতার নাম আনোয়ার জাহিদ। বাম রাজনীতির দিক্ষা নিয়ে রাজনীতির মাঠে এলেও জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতির সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি দেশের জনগণকে নতুন মডেলের রাজনীতি উপহার দিয়েছেন। সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন উজ্বল নক্ষত্র। 

    আনোয়ার জাহিদ ছিলেন সততা ও মেধাভিত্তিক রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য আনোয়ার জাহিদ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। 

    জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মাঝে অকল্পনীয় যে ঐক্যের সূচনা হয়েছিল তার রূপকার ছিলেন তিনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই রূপকারকেই এক সময় দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার গড়ে দেয়া ঐক্য ২০০১-০৬ পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনা করলেও একবারও তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারেনি। এমনকি তার চিকিৎসার জন্যও পাশে দাঁড়ায়নি তারা।

    তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে। যার ফল আজও আমাদের ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ভোগ করতে হচ্ছে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া পরবর্তী জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থক নেতৃত্ব দিয়েছেন আনোয়ার জাহিদ। যখন রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আঙ্গুল উঠানো হয় তখন আনোয়ার জাহিদকে উপস্থিত করা যায় সততার দৃষ্টান্ত হিসাবে। 

    আনোয়ার জাহিদ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কঠোর সমালোচনা করলেও কারো সর্ম্পকে কুটুক্তি বা অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করতেন না, যা আজকের রাজনীতিতে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তিনি সারা জীবন জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করেছেন। তার প্রদর্শিত পথে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জাতীয়তাবাদী শক্তি ক্ষমতা ভোগ করেছে।

    আনোয়ার জাহিদ কখনো তার রাজনীতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তিনি যে রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন তাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করতেন। আমরা যখন শুধুমাত্র ক্ষমতায় জন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসকে পদদলিত করতে কুণ্ঠিত হই না, তখন আনোয়ার জাহিদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন রাজনীতির সংজ্ঞা কী? নীতিহীন রাজনীতির যুগে আনোয়ার জাহিদ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধ্রুবতারা। তাঁর মতো মেধাবী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতার আজ বড়ই প্রয়োজন।

    আনোয়ার জাহিদ ১২ জুন ১৯৩৮ সালে ঝিনাইদহের ঘোড়াশাল ইউনিয়নের নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এ এম দেলোয়ার হোসেন ও মাতা রাজিয়া বেগম। তিনি ১৯৫৬ সালে ঝিনাইদহ মডেল হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি খুলনা বিএল কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৬১ সালে তিনি কারাগারে আইনজীবী কামরুননাহার লাইলীকে বিয়ে করেন। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

    আনোয়ার জাহিদ ৫৫ সালে সাহিত্য মজলিসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেহাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে অর্ধ সাপ্তাহিক ধূমকেতুর সহকারী সম্পাদক, ১৯৫৯ সালে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক, ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক, ১৯৬৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার সম্পাদক, ১৯৬৬ সালে ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডের উপ-সম্পাদক, ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক গণবাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, ১৯৭২ সালে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি পিপলসের বার্তা সম্পাদক ও বাংলাদেশ টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। 

    সর্বশেষ তিনি দৈনিক ইনকিলাবের উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২, ৬৩, ৬৪, সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজ) সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৫ ও ৬৬ সালে সহ-সভাপতি, ১৯৭৮ ও ৮৩ সালে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

    ১৯৫৬ ছাত্রলীগের ঝিনাইদহ মহকুমার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজের ছাত্রসংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে কারামুক্ত হন। 

    ১৯৬৫ সালে নিখিল-পাকিস্তান ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
    ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৬ সালে ন্যাপ দুই ভাগে বিভক্ত হলে তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে ন্যাপ পুনর্গঠিত হলে তিনি কেন্দ্রীয় সদস্য হন।

    ১৯৭৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন ও ঘোষণাপত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। একই সাথে তিনি ন্যাপের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। পরে গণতন্ত্রী পার্টি গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন এরশাদ সরকারের তথ্য, ত্রাণ এবং শ্রম-জনশক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারি ১৯৮৮ সালে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন।

    ১৯৮৯ সালে তিনি এনডিপি এবং ১৯৯১ সালে বিএনডিপি গঠন করে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালের ১০ দলের সমন্বয়ে গঠিত এনডিএ’র সিক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপার্সনেরর তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন।

    আনোয়ার জাহিদ ১৩ আগস্ট ২০০৮ সালে ঢাকার গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরণ করি।

    যখন রাজনীতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আঙ্গুল উঠানো হয় তখন আনোয়ার জাহিদকে উপস্থিত করা যায় সততা দৃষ্টান্ত হিসাবে। আনোয়ার জাহিদ রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের কঠোর সমালোচনা করলেও কারো সর্ম্পকে কুটুক্তি বা অশ্লীল শব্দের ব্যবহার করতেন না। 

    যা আজকের রাজনীতিতেই ক্রমেই কমে হ্রাস পাচ্ছে। তিনি সারা জীবন জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করেছেন। আনোয়ার জাহিদ আজীবন সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে গেছেন। তার মতো মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান নেতার প্রয়োজন জাতি সব সময় অনুভব করবে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন