ই-সিগারেট নিষেধাজ্ঞা জনস্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক বার্তা: হার্ট ফাউন্ডেশন


জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিকোটিন আসক্তির ঝুঁকি থেকে রক্ষায় সরকার দেশে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদনের অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে। এ সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
গত শনিবার (২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ই-সিগারেট তরুণ সমাজকে নিকোটিন আসক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এটি কোনোভাবেই নিরাপদ বিকল্প নয়। নিকোটিন কিশোরদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সরকার কেবল এটির উৎপাদন বন্ধ করেনি—বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করেছে। এটি জাতির জন্য একটি দূরদর্শী ও সাহসী পদক্ষেপ।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১ ড. আহমেদ উল্লাহ’র সই করা চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো দেশে ই-সিগারেটের আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। পূর্বে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও উৎপাদনের সুযোগ খোলা ছিল। নতুন এই নির্দেশনার মাধ্যমে দেশে ই-সিগারেট ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ উৎপাদনের পথও সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হলো।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে আমরা জানি, ই-সিগারেটও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি করে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করে—যা বহু আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, হংকংসহ বিশ্বের ৪২টি দেশ ই-সিগারেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে এবং আরও ৫৬টি দেশের বিক্রি ও বিপণনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এ প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সরকারের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ। তামাকজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ সরকারের এই যুগোপযোগী নির্দেশনাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণীত সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদে পাশেরও দাবি জানিয়েছে হার্ট ফাউন্ডেশন।
দৈএনকে/জে, আ
