ব্রাহ্মণবাডিয়ায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া


প্রতি বছরই ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রচারে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকলেও বাস্তবে কতটা কার্যকরভাবে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক প্রশ্ন ও সন্দেহ।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষক এবং সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে আসা অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ। পূর্বে মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ শোনা গেলেও চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় খাদ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ও মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন, অনিয়ম ও কৃষি কার্ড বাণিজ্যের অভিযোগ লিখিতভাবে জমা পড়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরসহ অধিকাংশ উপজেলার খাদ্য গুদামে ওসি এলএসডি (গুদাম কর্মকর্তা) গণ গোপনে মিল মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে অতিরিক্ত আদ্রতার চাল গ্রহণ করছেন। প্রতি টন চাল বা ধানের ক্ষেত্রে ১,২০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
অতিরিক্ত আদ্রতার চাল সরবরাহের সুবিধা পেতে মিল মালিকরা ওসি এলএসডিদের নিয়মিত ঘুষ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি দালাল সিন্ডিকেট কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড কিনে অগ্রিম চেকে স্বাক্ষর নিয়ে অনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এতে প্রকৃত কৃষকরা সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশুগঞ্জ, সদর, বিজয়নগর, সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে ধান উৎপাদন হওয়ায় এসব এলাকায় ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়া ঘিরে গড়ে উঠেছে গোপন আর্থিক লেনদেনের চক্র।
একজন প্রভাবশালী মিল মালিক, যিনি অটো রাইসমিল মালিক সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্বীকার করেন যে, ধান ছাঁটাইয়ের পর সরবরাহ করা চালের আদ্রতা ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হলেও তা সরকারি গুদামে বিক্রি করা সম্ভব হয় ঘুষের বিনিময়ে। এমনকি প্রয়োজন হলে তিনি নিজে ওসি এলএসডিকে বলে দেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, গুদামে ধান ঢোকানোর সময় আদ্রতা পরীক্ষার মেশিন দরজার পাশে থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে, অফিস থেকে তা এনে ব্যবহার করতে হয়েছে। একাধিক বস্তায় ধানের আদ্রতা ১৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যায়, যেখানে সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রা ১৪ শতাংশ।
চালের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্ধারিত আদ্রতা না থাকলে সরকারি বস্তায় করে ধান বা চাল গুদামে নেওয়ার কথা নয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেই নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কানিজ জাহান বিন্দুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে সরাসরি তার কার্যালয়ে গেলে তিনি জানান, আমরা সরকারি নিয়মের মধ্যেই ধান-চাল সংগ্রহ করছি। এরপর তিনি অফিসের দুই কর্মকর্তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছর সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয় ২৪ এপ্রিল থেকে, যা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে আদ্রতা ও ন্যায্যমূল্য সংক্রান্ত এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
