রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আত্মতুষ্টি নয়, প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহিতা


রাজধানী ঢাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে চলা হত্যা, চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধের পরিসংখ্যান এক গভীর উদ্বেগের বার্তা দিচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ২০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ড, ৫টি ডাকাতি, ৪৬টি ছিনতাই এবং ৭০টি চাঁদাবাজির মামলা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ছয়টি করে চুরির মামলা নথিভুক্ত হচ্ছে।
এই সংখ্যাগুলো নিছক পরিসংখ্যান নয়, এগুলো একটি জনবহুল নগরীর নিরাপত্তাহীন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যদিও ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
প্রতিদিনের খবরের শিরোনামে যে ভয়াবহ ঘটনাগুলো উঠে আসছে, সেগুলো রাজধানীবাসীর নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিকে বারবার উসকে দিচ্ছে। মোহাম্মদপুরের কিশোর গ্যাং 'কব্জি কাটা গ্রুপ', গুলশানের চাঁদাবাজির ঘটনা, কিংবা প্রতিদিনের ছিনতাই, সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যায়, অপরাধীরা যেমন বেপরোয়া, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় কিছু গলদ রয়েই গেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মামলা দায়ের, বিপুল সংখ্যক গ্রেফতার কিংবা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে জারিমানা সবই ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এসব ব্যবস্থা অপরাধ প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হচ্ছে? একদিকে যেমন সাঁড়াশি অভিযানে প্রতিদিন শত শত অপরাধী ধরা পড়ছে, অন্যদিকে অপরাধের পরিমাণ কমছে না বরং নতুন নতুন কৌশলে অপরাধ বাড়ছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘সহনীয় মাত্রায়’ রয়েছে এবং তারা ‘সক্রিয়ভাবে কাজ করছে’। কিন্তু একটি আধুনিক রাজধানীতে প্রতিদিন ছিনতাই, খুন ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনা কীভাবে ‘সহনীয় মাত্রা’য় পড়ে, সেটিই এখন প্রশ্ন।
অপরাধ দমনে শুধু অভিযান নয়, প্রয়োজন গোয়েন্দা নজরদারি, স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তকরণ এবং থানায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে যখন থানাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তখন পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ়তা আরও বেশি প্রয়োজন।
নগরবাসীর নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় জনগণের সহযোগিতাও প্রয়োজন। কিন্তু সেই সহযোগিতার পূর্বশর্ত হলো পুলিশের প্রতি আস্থা। থানায় গিয়ে শালিস বা 'দেনদরবারের' সংস্কৃতি, রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের তদবির, এসব থেকে বেরিয়ে না আসলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি হবে না।
সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত অপরাধ যেন নগরজুড়ে ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
পরিশেষে, আত্মতুষ্টি নয়’ রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পুলিশ প্রশাসনকে হতে হবে আরও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতার উপযোগী।
