রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • কাস্পিয়ান সাগরের সংকট, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার সময় এখনই জুনের ২৮ দিনে রেমিট্যান্স আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়াল ২০২৫ সালে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ অপরিবর্তিত জ্বালানি তেলের দাম কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার নারীকে নিরাপত্তা ও চিকিৎসা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল কর্মস্থলে ফিরুন, নয়তো ব্যবস্থা: এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বার্তা ৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বাতিল প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ না থাকলে আসামিকে মুক্তি দিতে পারবে আদালত: আইন উপদেষ্টা ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ও ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’
  • মঙ্গলের পাথুরে গঠনে বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার

    মঙ্গলের পাথুরে গঠনে বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    মঙ্গল গ্রহে নাসা’র প্রেরিত ‘কিউরিওসিটি রোভার’ আবারও নতুন তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। মঙ্গলপৃষ্ঠে বিভিন্ন অনুসন্ধানী অভিযান চালানো এই রোবোটিক যানটি এবার ইঙ্গিত দিয়েছে, মঙ্গলে ভূগর্ভস্থ পানির অস্তিত্ব বিজ্ঞানীদের অনুমানের চেয়েও বেশিদিন টিকে ছিল। সম্প্রতি মঙ্গলের বক্সওয়ার্ক নামক অঞ্চলে খনন করে রোভারটি যে তথ্য দিয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এমনটাই ধারণা করছেন। 

    বক্সওয়ার্ক অঞ্চলটিতে ৬ থেকে ১২ মাইল এলাকা জুড়ে আছে একাধিক শৈলশিরা। এই শৈলশিরাগুলো পাশাপাশি এমনভাবে অবস্থান করছে দূর থেকে একে জালের মতো খাঁজকাটা একটি নকশা (গ্রিড-সদৃশ প্যাটার্ন) বলে মনে হয়। অঞ্চলটি এর আগে এতটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি বিজ্ঞানীদের। কিউরিওসিটি রোভার এবারে এই সুযোগটিই করে দিয়েছে।

    বিজ্ঞানীদের এতদিনের ধারণা ছিল, এই অঞ্চলে পানির শেষ অস্তিত্বটুকু শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তৈরি হয়েছিল এই শৈলশিরাগুলো। কিন্তু বক্সওয়ার্ক অঞ্চলে রোভারটির আবিষ্কৃত খনিজ শিরাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, অঞ্চলটির ভূগর্ভস্থ পানি বিজ্ঞানীদের অনুমানের চেয়েও সময় টিকে ছিল।

    শৈলশিরাগুলোর মধ্যবর্তী শিলাস্তরে রোভারটি ক্যালসিয়াম সালফেটের সাদা রঙের শিরার উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছে। ক্যালসিয়াম সালফেট হচ্ছে লবণাক্ত খনিজ যা ভূগর্ভস্থ পানি শিলার ফাটলে প্রবেশের শিলার ওপরে জমা হয়। মঙ্গলগ্রহের পূর্ববর্তী যুগের নিম্ন শিলাস্তরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে এই ক্যালসিয়াম সালফেট বা লবণাক্ত খনিজ। 

    কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভাবতে পারেনি যে, রোভারটি বর্তমানে শিলার যে স্তরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সেখানেও দেখা মিলবে এই পদার্থটির। কেননা এই শিলাস্তরটি অনেক পরে তৈরি হয়েছিল।

    এ সম্পর্কে কিউরিওসিটি প্রোজেক্টের সহকারী বিজ্ঞানী আবিগেল ফ্রেইমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক। ক্যালসিয়াম সালফেটের এই শিরাগুলো আগে সব জায়গায় ছিল, কিন্তু আমরা যখন শার্প পর্বতের উপরের দিকে উঠছিলাম তখন এগুলো (ক্যালসিয়াম সালফেটের শিরাগুলো) প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেল।’ এখন শিলার এতটা উপরের স্তরেও কী করে এই পদার্থটির দেখা মিলল তা জানতে বিজ্ঞানীদের দলটি উদগ্রীব হয়ে উঠেছে।

    উল্লেখ্য, ‘লাল গ্রহ’ নামে পরিচিতি মঙ্গলে এক সময় পানির অভাব ছিল না। নদী, হ্রদ, এমনকি সম্ভবত মহাসাগরও ছিল আজকের এই শুষ্ক গ্রহটিতে। কিন্তু সে সবই মঙ্গলের প্রাচীনকালে। পরবর্তীতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে এই গ্রহটির পরিবেশ ধুলোময়, ঠাণ্ডা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। 

    এখানে বিজ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা, কখন এই পরিবর্তন এসেছে এবং জীবনধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ কোন সময় পর্যন্ত বজায় ছিল এই গ্রহটিতে। এর স্পষ্ট উত্তর এখনও জানা নেই বিজ্ঞানীদের। তার ওপর কিউরিওসিটি’র সংগ্রহ করা নতুন সব তথ্য গ্রহটির টাইমলাইন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের এতদিনের ধারণাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

    রোভারটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গেল ক্রেটারে (বিশাল গর্ত) অবস্থিত শার্প পর্বতের শিলাস্তরগুলোকে নিচ থেকে পড়তে পড়তে ওপরে উঠে আসছে। অনেকটা গ্রহের ইতিহাসের পাতার মতো করেই শিলাস্তরগুলোকে পড়ছে এটি, বা বলা চলে তথ্য সংগ্রহ করছে। 

    বর্তমানে রোভারটি শিলার যে স্তরে অবস্থান করছে তা ম্যাগনেসিয়াম সালফেটে পূর্ণ। গবেষকদের ধারণার সাথেই এটি মিলে যায়। এই পর্যায়েই মঙ্গল আজকের এই শুষ্ক গ্রহে পরিণত হতে শুরু করে বলে বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের। উল্লেখ্য, ম্যাগনেসিয়াম সালফেটেও এক প্রকার লবণাক্ত খনিজ যা সাধারণত পানি বাষ্পীভূত হওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। 

    এ মাসেই কিউরিওসিটি খনন করে বের করেছে নতুন এক নমুনা ‘আলটাডেনা’। রোভারটি খননের মাধ্যমে বক্সওয়ার্ক অঞ্চলের গঠন বিশ্লেষণ করছে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলটি কীভাবে গঠিত হয়েছিল, কী কী খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব আছে এখানে এবং প্রাচীন এককোষী অণুজীব সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি-না সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবেন।

    তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কিউরিওসিটি রোভার এ অঞ্চলে আর কিছু শৈলশিরায় খনন করবে। এরপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানার চেষ্টা করবে ভূগর্ভস্থ পানি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য কিউরিওসিটি’র পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে বক্সওয়ার্ক অঞ্চলের আরও গভীরে, যেখানে জালের মতো খাঁজকাটা নকশাগুলো (গ্রিড-সদৃশ প্যাটার্ন) আরও বিস্তৃত ও ভিন্ন হয়ে থাকে।

    সার্বিকভাবে কিউরিওসিটি রোভারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মঙ্গলের প্রাচীনকালের জৈব অণু ও বাসযোগ্য পরিবেশের অন্যান্য সম্ভাব্য প্রমাণ খুঁজে বের করা। এই উদ্দেশ্যে মঙ্গল গ্রহ চষে বেড়ানোর কাজ রোভারটি অব্যাহত রাখবে।

    আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০১২ সালে মঙ্গল গ্রহে পাঠায় অনুসন্ধানী রোবোটিক মহাকাশযান কিউরিওসিটি রোভার-কে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রোভারটি মঙ্গলের পরিবেশ সম্পর্কিত নানা তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। নাসা’র বিজ্ঞানীরা সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানতে পেরেছেন। 

    তথ্যসূত্র: নাসা, ম্যাশেবল 


    দৈএনকে/জে .আ
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ