টানা ৫ দিনে দরপতনে ডিএসই সূচক কমল ৪.৫০%


টানা পঞ্চম দিনে দেশের শেয়ারবাজারে দর পতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সিংহভাগ শেয়ার দর কমার ফলে ডিএসইএক্স সূচক ২৪৫ পয়েন্ট নিচে নামে এবং ৫২০২ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সূচক পতনের হার প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ। এর মধ্যে রোববার একদিনে সূচক ৮১ পয়েন্ট কমেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ৫ কর্মদিবসে তালিকাভুক্ত ৯২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রধান তিনটি ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ লক্ষ্য করেছেন। এগুলো হলো– মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধন, তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এবং বিগত সরকারের সময়কার গুম-খুন ইস্যুতে সেনা অফিসারদের নামে ওয়ারেন্ট জারি-পরবর্তী নানা আলােচনা। ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। তাই এই ইস্যুগুলো চলতি দর পতনের জন্য দায়ী হতে পারে। একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের এমডি সমকালকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বিনিয়োগকারীর শেয়ার ক্রয়ে বাজারে গতি এসেছিল, তাদের অনেকে এখন নিষ্ক্রিয় বা লেনদেন কমিয়ে এনেছেন। এরও প্রভাব থাকতে পারে।
জানতে চাইলে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এ মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের সামনে নেতিবাচক ইস্যু ছাড়া ইতিবাচক কিছু নেই, যার ওপর ভরসা করে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভুক্ত পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি করতে যাচ্ছে, যেখানে শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। একই সঙ্গে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডারদেরও কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিনিয়োগকারীদের কাছে এটা সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। তারা জানতেন, এই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যা আছে, তবুও শেয়ার কিনেছিলেন। কারণ সরকার থেকে শুরু করে সব নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছিল বা প্রশ্রয় দিয়েছিল। তাদের কারও কিছু হচ্ছে না, শুধু শেয়ারহোল্ডারদের দায় নিতে হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, যে কারণে পাঁচ ব্যাংক এবং ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার শূন্য হতে যাচ্ছে, সেই একই কারণে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানের একই পরিণতি হতে পারে, কারণ তারাও একই খারাপ অবস্থায় আছে। এসব বিনিয়োগকারীদের ভীত করতে পারে।
এর বাইরে দীর্ঘ সংস্কার প্রক্রিয়াও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন এই ব্রোকারদের নেতা। তিনি বলেন, গত এক থেকে দেড় বছর ধরে শুধু শেয়ারবাজার সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। সংস্কারের দেখা নেই। দুই বছর ধরে বাজারে একটি আইপিও নেই, এটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। নতুন শেয়ার না এলে বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবেন।
বাজার সংক্ষেপ গতকাল ডিএসইতে ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৯২টি দর হারিয়েছে, বেড়েছে মাত্র ৩৮টির দর। এ ছাড়া ৩৭ মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৮টি দর হারিয়েছে। সর্বাধিক দর হারিয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র, খাদ্য, সিমেন্ট, তথ্যপ্রযুক্তি, কাগজ এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের শেয়ার। লেনদেন হয়েছে ৫৪২ কোটি টাকার।
