বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • প্রধান উপদেষ্টা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেননি: প্রেস সচিব গণঅভ্যুত্থানে নিহত শিশুদের পরিবারকে সম্মান জানাবে সরকার নাকভি নতুন শর্তে ভারতকে ট্রফি দিতে রাজি বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি: শিশু-তরুণদের অন্তর্ভুক্তিতে অভিনন্দন ইউনিসেফের সরকারি মাদ্রাসার শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের অঙ্গীকার শিক্ষ উপদেষ্টার সরকারি কেনাকাটায় ই-জিপি বাধ্যতামূলক ঘোষণা শারদীয় ছুটিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগান্তি, ১৯ কিমি যানজট রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ালো মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার জামায়াত নেতা শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সুইডেন রাষ্ট্রদূত ৪৯তম বিশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি: দায়িত্বে ১৯৪ ম্যাজিস্ট্রেট
  • তিস্তায় অবৈধ পাথর উত্তোলন, ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ

    তিস্তায় অবৈধ পাথর উত্তোলন, ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    উত্তরবঙ্গের প্রাণখ্যাত তিস্তা নদী এখন সংকটাপন্ন। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় দিন-রাত অবৈধ পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা নদীর বুক খুঁড়ে পাথর তুলতে নেমে পড়ে। নদীর তলদেশ খুঁড়ে তোলা পাথর দূরের শহরে চলে যাচ্ছে, আর রেখে যাচ্ছে ফাঁকা বুক, ভাঙা তীর এবং নিঃস্ব মানুষ।

    তিস্তা নদী, যা উত্তরবঙ্গের কৃষি ও জীবনের প্রাণ, আজ কাঁদছে। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নদীর বুক খুঁড়ে নেওয়া এই পাথর উত্তোলন স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং নদীর দুইপাড়ের গ্রামগুলোতে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর ফলে ফসলি জমি হারাচ্ছে, মানুষজন সর্বস্বান্ত হচ্ছে, এবং নদীপাড়ের জীবন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে।

    মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে দিনব্যাপী চলা অভিযানে নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রশাসনের সঙ্গে একত্রে অবৈধ চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। অভিযানে দুইজন পাথর ব্যবসায়ীকে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছে, জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ঘনফুট পাথর এবং চারটি পাথর ভাঙার যন্ত্র। অভিযান আজও (১ অক্টোবর) চলমান।

    ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরানুজ্জামান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) রওশন কবির অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ডিমলা থানা পুলিশের একটি চৌকস দল এবং টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীনও উপস্থিত রয়েছেন।

    স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র প্রতিদিন নদী থেকে পাথর উত্তোলন করছে। এর ফলে নদীর দুইপাড়ের গ্রামগুলোতে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে, ফসলি জমি হারাচ্ছে এবং মানুষজন সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ছোটখাতা, তফেল মেম্বারপাড়া, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, বার্ণিলঘাট ও বিজিবি ক্যাম্পে নদী ভাঙনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

    স্থানীয় জুলহাস ইসলাম জানান, শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লোহার যন্ত্র ব্যবহার করে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। তিস্তা ও ব্যারেজের আশপাশ, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ ও ভেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্রায় ১৫টি প্রভাবশালী চক্র সক্রিয়। এসব চক্র শতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করছে, যা স্থানীয় সিন্ডিকেট ক্রয় ও বিক্রি করছে।

    ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহী জানান, “অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমরা একাধিক মামলা করেছি এবং পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর।"

    ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান বলেন, "নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন আইনত নিষিদ্ধ। অভিযোগ পেলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।" তিনি আরও জানান, এই অভিযান নতুন নয়। ২১ সেপ্টেম্বর এক অভিযানে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, ২০ আগস্ট সাড়ে ৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে এবং ২৪ সেপ্টেম্বর বার্ণিলঘাটে ১৩টি পাথর বোঝাই নৌকা ও ৯টি পাথর ভাঙার যন্ত্র জব্দ করা হয়।

    নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, “যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে একটি বড় অভিযান চালানো হবে। অবৈধ পাথর উত্তোলন করে যারা হাজার হাজার মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে, তাদের কেউ ছাড় পাবে না।”

    নদী ও পরিবেশবাদী সংগঠন রিভারাইন পিপল এর সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হাক্কানী বলেন, “নদীর বুক থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার পাথর যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। নদীপাড়ের মানুষ হারাচ্ছে শেষ সম্বল। প্রশাসনের অভিযান সত্ত্বেও কয়েকদিন পর নৌকাগুলো আবার নদীর বুক খুঁড়তে শুরু করছে। তিস্তাপাড়ের মানুষ এখন এক অনিশ্চয়তার স্রোতে ভাসছে, যেখানে প্রতিদিন তাদের ভিটেমাটি নদীতে হারছে। প্রশ্ন একটাই—নদী কি টিকবে, নাকি সব ফুরিয়ে গেলে তখনই সবার টনক নড়বে?”

    উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অবৈধ পাথর-বালু উত্তোলন চক্রের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখা হবে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    আরও পড়ুন