ভেঙে পড়েও থেমে যাননি রেজওয়ানুলের জীবন যুদ্ধ


বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক সময়ের পরিশ্রমী যুবক রেজওয়ানুল ইসলাম হারিয়ে ফেলেছিলেন তার শরীরের স্বাভাবিক সক্ষমতা। হঠাৎ ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনা শুধু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়, ভেঙে দিয়েছিল স্বপ্নও।
রেজওয়ানুল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিমহেষপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিঃস্ব পরিবার তার চিকিৎসায় সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল, তবুও পূর্ণ শারীরিক সক্ষমতা ফিরে আসেনি।
তবুও হার মানেননি রেজওয়ান। জীবনকে নতুনভাবে গড়ার সংকল্প নিয়ে মাত্র ৪০০ টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া কর্ণফুলী বাজারে একটি ছোট পানের দোকান খুলে বসেন।
প্রথমে অনেকেই তাচ্ছিল্য করেছিল, কেউ কেউ করুণা দেখিয়েছিল। কিন্তু দিন দিন পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং অদম্য মানসিকতায় দোকানটি দাঁড়িয়ে যায়।
আজ সেই ছোট দোকানই তার জীবনের ভরসা, আত্মমর্যাদার প্রতীক।
রেজওয়ান বলেন, “সহানুভূতি চাই না, চাই সম্মান। যতটুকু পারি, পরিশ্রম করে খেতে চাই।”
তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। দুর্ভাগ্যক্রমে তার একমাত্র ছেলেটিও মানসিক প্রতিবন্ধী। নিজেই শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে, তবুও সন্তানের ভবিষ্যৎ, স্ত্রীর সহায়তা এবং সংসারের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দোকানে বসেন। তার মুখে কোনো অভিযোগ নেই, আছে শুধু দায়বদ্ধতা আর জীবনকে আঁকড়ে ধরার অদম্য চেষ্টা।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, “রেজওয়ানের জীবনযুদ্ধ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। একজন মানুষ এত প্রতিকূলতার পরও মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। তা সে আমাদের চোখে দেখিয়ে দিয়েছে।”
স্থানীয় সমাজসেবক ও রুহিয়া সালেহিয়া মাদরাসা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আবু শাহিন বলেন, “রেজওয়ান এই এলাকার জন্য এক অনন্য উদাহরণ। সে আমাদের শিখিয়েছে মানুষ শুধু দান বা করুণার ওপর বাঁচে না, আত্মমর্যাদা নিয়েই বাঁচতে চায়। রেজওয়ানের মতো সংগ্রামী মানুষের পাশে সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবিক সংগঠনগুলোর দাঁড়ানো উচিত। তার জীবন আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।”
তীব্র কষ্ট, সীমিত শারীরিক সামর্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকট, সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি টিকিয়ে রেখেছেন ছোট্ট সংসার, আত্মমর্যাদা এবং জীবনের আশাভরসা।
রেজওয়ানের মতো মানুষরা সমাজের করুণা নয়, বরং সম্মানের দাবিদার।
কারণ তারাই সত্যিকারের নীরব বীর। যারা জীবনকে ভালোবেসে আবার দাঁড়িয়ে যান, বারবার ভেঙে পড়ার পরও।
