মরণ ফাঁদ: ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার


রাজধানীর মহাখালী-যেখানে হাজারো মানুষের প্রতিদিনের পথচলা, অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের কর্মব্যস্ততা-সেখানেই লুকিয়ে আছে এক মরণ ফাঁদ। ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও বহু পথচারী ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার ভাঙা আইল্যান্ডের ফাঁক গলে চলাচল করছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
মহাখালী আশপাশের এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পথচারীরা অধিকাংশ সময় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সরাসরি রাস্তা পার হচ্ছেন। অথচ মাত্র ৫০ গজ দূরে অবস্থিত একটি আধুনিক ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, যেখানে চলাচলের সুব্যবস্থাও আছে। তবে ব্রিজে উঠতে অলসতা, সময় সাশ্রয়ের প্রবণতা এবং পুলিশের অনুপস্থিতি অনেককেই নিচ দিয়ে চলতে উৎসাহিত করছে।
ভাঙা আইল্যান্ড—ঝুঁকির প্রধান উৎস: রাস্তার মাঝখানে থাকা বিভাজনকারী (আইল্যান্ড) অংশবিশেষ ভেঙে পড়েছে, আর তাতেই তৈরি হয়েছে অঘোষিত ‘গেইট’। সেখান দিয়েই মানুষ যাতায়াত করছে অবলীলায়। কিছু জায়গায় ইট, পাথর কিংবা বাঁশ ফেলে কেউ কেউ পথ তৈরি করেছে। এতে একদিকে যেমন পথচারীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, তেমনি ব্যস্ত এই সড়কে চালকদেরও হঠাৎ করে রাস্তা পার হওয়া মানুষের জন্য ব্রেক কষতে হচ্ছে। সৃষ্ট হচ্ছে যানজট ও বিশৃঙ্খলা।
প্রশাসনের দায়হীনতা: ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও চোখের সামনে এই অনিয়মে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। আবার সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও ভাঙা আইল্যান্ড সংস্কার বা পথচারীদের সচেতন করতে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এই ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা চিহ্নিত করার দায়িত্ব আমাদের, তবে মাঝে মাঝে স্থানীয়ভাবে মানুষই ভেঙে ফেলছে চলাচলের জন্য।” এ বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর মতোই শোনায়।
পথচারীর হতাশা ও আতঙ্ক: একজন পথচারী কলেজ শিক্ষার্থী জানায়, “আমরা জানি এটি বিপজ্জনক, কিন্তু ব্রিজ দিয়ে ঘুরে গেলে সময় বেশি লাগে। আর পুলিশের কেউ বাধাও দেয় না।”
অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমার চোখের সামনে একবার একজন বৃদ্ধ লোক রাস্তা পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো, গাড়ি একটু দূরে ছিল। না হলে কী হতো কে জানে!”
দায় কে নেবে? এই প্রশ্নই এখন সামনে। ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল, ভাঙা আইল্যান্ড দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত পারাপার, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা—সব মিলিয়ে যেন একটি মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি হয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায়। কেউ যদি দুর্ঘটনার শিকার হন, তার দায় কে নেবে?
সিটি কর্পোরেশন? ট্রাফিক বিভাগ? নাকি পথচারীর অজ্ঞতা?
দায় কার, এই বিতর্কের বাইরে গিয়ে এখন প্রয়োজন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। ভাঙা আইল্যান্ড সংস্কার, পথচারীদের সচেতন করা এবং প্রয়োজনে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে হয়তো এই মরণ ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব। তা না হলে আরেকটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে রাজধানীবাসীকে।
এন কে/বিএইচ
