সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • ইসলামিক এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনকে হাজির হওয়ার নির্দেশে গেজেট প্রকাশ সংস্কারবিরোধী দেখানোর চেষ্টা চলছে পরিকল্পিতভাবে: মির্জা ফখরুল ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জব্দকৃত জমি বিক্রির অভিযোগে ফের বিতর্কে তারিক সিদ্দিক নতুন প্রস্তাবে স্থবিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে উদ্বেগ: ফখরুল যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর খামেনির জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার কোনো সুযোগ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেষের নাটকে মোস্তাফিজের জাদু, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে বাঁচল বাংলাদেশ এশিয়ান কাপে দুর্দান্ত আগমন, তুর্কমেনিস্তানকে গোল বন্যায় ভাসাল বাংলাদেশ নারী দল
  • সবুজ বাংলাদেশের পথে ঐতিহ্যের বৃক্ষমেলা

    সবুজ বাংলাদেশের পথে ঐতিহ্যের বৃক্ষমেলা
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সবুজে ঘেরা ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষমেলা-২০২৫। ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’—এই স্লোগানে আয়োজিত মাসব্যাপী মেলা শুধুমাত্র গাছের চারা কেনাবেচার আয়োজন নয়, বরং এটি রূপ নিয়েছে একটি পরিবেশ-সচেতন সামাজিক আন্দোলনে, যার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রান্তে প্রান্তে।

    মেলার আয়োজন ও বৈচিত্র্য: প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছে বন অধিদফতর। আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত এই মেলায় রয়েছে মোট ১১২টি স্টল, যার মধ্যে ৯২টি নার্সারির। এর মধ্যে ১৮টি ডাবল স্টল, যেগুলো বিভিন্ন নার্সারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে নিজস্ব উদ্যোগে।

    এছাড়া, সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে মেলাটি আরও সমৃদ্ধ। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), দর্শনার্থীদের সহায়তায় মেলায় রয়েছে তথ্য সেল ও কন্ট্রোল রুম।

    সবুজ আন্দোলনের ইতিহাস ও বিস্তার: জাতীয় বৃক্ষমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে এ আন্দোলনের বীজ বপিত হয় আরও আগেই—১৯৯১ সালের ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল। এরপর ১৩ আগস্ট, গাজীপুরের শালনা গ্রামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একটি মেহগনি গাছ রোপণের মাধ্যমে ‘বৃক্ষরোপণ অভিযান ’৯১’-এর সূচনা করেন। সময়ের পরিক্রমায় এই কর্মসূচি আজ পরিণত হয়েছে বৃহৎ জনসম্পৃক্ত এক সবুজ বিপ্লবে।

    মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বন অধিদফতর জানিয়েছে, বৃক্ষমেলার মূল উদ্দেশ্য হলো— সাধারণ মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করা, ফলজ, বনজ ও শোভাবর্ধক গাছের উপকারিতা প্রচার, উন্নতমানের চারা সরবরাহ এবং বনায়ন প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরা, বৃক্ষচাষকে আয়বর্ধক খাত হিসেবে পরিচিত করা, সচেতনতামূলক লিফলেট ও পুস্তিকা বিতরণ। মেলায় দেশীয় ফল, ঔষধি গাছ, বনজ গাছ ছাড়াও রয়েছে সৌন্দর্যবর্ধক গাছ, বনসাই, ক্যাকটাস, ইনডোর প্লান্টসহ নানা জাতের চারা। এবারের মেলায় কলাম গাছের চাহিদা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

    বিক্রির পরিসংখ্যান ও জনসাড়া: গত ২০২৪ সালের বৃক্ষমেলায় বিক্রি হওয়া চারা সংখ্যা ছিল ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩টি, যার বিক্রয় মূল্য ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার ১০ টাকা। তার আগের বছর ২০২৩ সালে বিক্রি হয় ২০ লাখ ৭ হাজার ২৮৭টি চারা, বিক্রয় মূল্য ছিল ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৯১ হাজার ৩৬০ টাকা। প্রতিবছরই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনসচেতনতা ও গাছপ্রীতির স্পষ্ট প্রতিফলন।

    রাজধানীর মহাখালী থেকে আসা মনোয়ারা বেগম বলেন, “বারোমাসী ফলের চারা কিনতে এসেছি। এখানে একসঙ্গে বিভিন্ন নার্সারির স্টল থাকে, তাই এই মেলাটি আমার খুব পছন্দ।” নাফিজ ইসলাম, এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, “রুমে একটু সবুজ যোগ করতেই ক্যাকটাস কিনতে এসেছি। গাছ ভালো লাগে—দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি মানসিক প্রশান্তিও দেয়।” আরেক বৃক্ষপ্রেমী দর্শনার্থী জানালেন, ছাদবাগান গড়ে তোলার পরিকল্পনায় মেলাই সবচেয়ে বড় সহায়ক।

    জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন- 
    “জীবন বাঁচাতে হলে আগে পরিবেশ বাঁচাতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি—এটি বন্ধ করতে হলে জাতিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

    তিনি আরও বলেন- “প্রতিটি নাগরিক যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একদিন প্লাস্টিক বর্জন করেন, তবে ধীরে ধীরে এটি সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা সম্ভব।”

    অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ আন্দোলনের নেত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।

    বৃক্ষমেলা কেবল একটি প্রদর্শনী নয়—এটি একটি সচেতনতা ভিত্তিক সামাজিক উদ্যোগ, যার শিকড় প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে এই উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি দরকার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্তরে সবুজকে স্থান দেওয়া।

    বৃক্ষরোপণ যেন শুধু সরকারি উদ্যোগ না হয়ে উঠে, বরং নাগরিক দায়িত্বে পরিণত হয়—এমন প্রত্যাশাতেই এগিয়ে চলুক জাতীয় বৃক্ষমেলা।


    এন কে/বিএইচ
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ