শেষের নাটকে মোস্তাফিজের জাদু, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে বাঁচল বাংলাদেশ


ধীরগতির উইকেটেও ধৈর্য আর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লড়াকু সংগ্রহ গড়লেন পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। এরপর বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রিত স্পেলে চাপ তৈরি করেন তানভির ইসলাম। শেষ দিকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জানিথ লিয়ানাগের হুমকি কাটিয়ে ম্যাচের নিষ্পত্তি এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফলাফল—শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে ফেরে বাংলাদেশ, নিশ্চিত হয় সমতা।
বাউন্ডারি লাইন পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জানিথ লিয়ানাগে। হতাশায় হেলমেট ও গ্লাভস ছুঁড়ে ফেললেন মাটিতে—কারণ বুঝে গেছেন, তার আগের বলের দুর্দান্ত ছক্কাও আর কিছুই বদলাতে পারছে না। ৭৮ রানের লড়াকু ইনিংসটাই হয়ে গেল বৃথা।
ম্যাচজুড়ে উইকেটহীন থাকলেও শেষ মুহূর্তে মোস্তাফিজুর রহমান সেই চেনা কাটারেই করলেন বাজিমাত। এক বলেই পাল্টে গেল ম্যাচের চিত্র, নিস্তেজ হয়ে গেল প্রতিপক্ষের শেষ আশা। ওই একটি ডেলিভারিতেই নিরসন হলো সব অনিশ্চয়তা, বাংলাদেশ পেল কাঙ্ক্ষিত জয়।
সাত মাস আর সাত ম্যাচ পর অবশেষে জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ, তাও রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে। ১৬ রানের এই জয় শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, দীর্ঘদিনের জয়ের খরা কাটিয়ে দিয়েছে পুরো দলকে। প্রেমাদাসার স্লো উইকেটে ২৪৮ রানের পুঁজি আধুনিক ওয়ানডের দৃষ্টিতে বড় না হলেও মেহেদী মিরাজের অধিনায়কত্বে সেটাই হয়ে ওঠে যথেষ্ট।
শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। পারভেজ হোসেন ইমন ৬৯ বলে ৬৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন, যার মাঝে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা। পরে তাওহিদ হৃদয় থিতু হয়ে ইনিংস গড়লেও তার রানআউটে হোঁচট খায় দল। শেষদিকে তানজিম সাকিবের ২১ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস এবং মোস্তাফিজের সঙ্গে ৩০ রানের শেষ জুটিতে স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ২৪৮ রানে।
বল হাতে শুরুতেই আঘাত হানেন তানজিম সাকিব, কিন্তু শ্রীলঙ্কা দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায়। কুশল মেন্ডিসের ৩১ বলে ৫৬ রানের ইনিংস এবং মাদুশকার সঙ্গে জুটি দলকে ১০ ওভারেই এনে দেয় ৭৫ রান। তখনই জ্বলে ওঠেন তানভির ইসলাম—পরপর দুই ওভারে ফেরান মাদুশকা ও মেন্ডিসকে।
মিরাজের দূরদর্শী নেতৃত্বে স্পিন আক্রমণে যোগ দেন তিনিই ও শামীম হোসেন। ১৪ থেকে ২৫ ওভারের মাঝে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তারা। শামীম তুলে নেন আসালঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
পরের ধাপে আবারও এগিয়ে আসেন তানভির। কামিন্দু মেন্ডিস ও ভেল্লালাগেকে ফিরিয়ে দেন তিনি। লিয়ানাগে অবশ্য একপ্রান্ত আগলে ধরে রাখেন, তুলে নেন ৭৮ রানের সাহসী ইনিংস। মোস্তাফিজের বলে তার সহজ ক্যাচ মিস করেন জাকের আলী—যা ম্যাচের রং বদলে দিতে পারত।
কিন্তু ৪৮তম ওভারে ছক্কা হজম করার পরের বলেই মোস্তাফিজ তার সিগনেচার কাটারে ফাঁদে ফেলেন লিয়ানাগেকে, ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। শেষ উইকেট হিসেবে চামিরাকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন তানজিম সাকিব।
এই জয় কেবল পরিসংখ্যানে নয়, আত্মবিশ্বাসেও অনেক বড় প্রাপ্তি। সিরিজ এখন ১-১ সমতায়, শেষ লড়াইয়ের জন্য অপেক্ষা পাল্লেকেলের মাঠে।
