আজ সেই দুঃস্বপ্নের দিন—ব্রাজিলের ৭-১ লজ্জার স্মৃতি


বিশ্বকাপের আসর ঘুরে ফিরে এলেও, কিছু স্মৃতি চিরকাল হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে তেমনই এক দগদগে ক্ষত হয়ে আছে ২০১৪ সালের ৮ জুলাই। হেক্সা জয়ের স্বপ্ন তখন চোখে, কিন্তু বাস্তবতা হয়ে উঠেছিল এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।
ঘরের মাঠে, বেলো হরিজেন্তের স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ব্রাজিল। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য সেটি ছিল শুধুই একটি হার নয়—ছিল এক ঐতিহাসিক লজ্জা, যা আজও ভুলতে পারেন না সমর্থকেরা।
ভবিষ্যতে হয়তো ব্রাজিল হেক্সা জয়ের স্বাদ পাবে, কিন্তু সেই রাতে যা হারিয়েছে, তা ফিরে পাওয়ার নয়। ৮ জুলাই আজও ব্রাজিলীয় ফুটবলে এক বেদনার প্রতীক।
খেলা ঘরের মাঠে। বেলো হরিজেন্তের স্তাদিও মিনেইরাও ঘিরে তখন উৎসবের আমেজ। প্রতিপক্ষ জার্মানি হলেও নিজেদের মাঠে ব্রাজিলকেই ফেবারিট বলছিলেন সবাই। ঘরের মাঠে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে যে তখন ৩৯ বছর ধরে অপরাজিত ব্রাজিল!
সেই দলটির এই হাল হবে কে ভেবেছিল! যদিও পূর্ণশক্তির দল সেদিন পায়নি ব্রাজিল। আগের ম্যাচেই নেইমারকে ভয়ংকর এক ইনজুরিতে ফেলেন কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার হুয়ান জুনিগা। রক্ষণের মূল স্তম্ভ থিয়াগো সিলভাও ছিলেন না কার্ডের কারণে।
তবু দলটা তো ব্রাজিল। নিজেদের মাঠে জার্মানিকে হারিয়ে দেবে দুরন্ত ছন্দে থাকা সেলেসাওরা, হেক্সার মিশনে এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে' সেটি ধরেই রেখেছিলেন সমর্থকরা।
তাদের সেই মোহভঙ্গ হতে সময় লাগেনি। ম্যাচের ১১ মিনিটেই এগিয়ে যা জার্মানি। কর্নার থেকে বল পেয়ে জার্মানিকে এগিয়ে দেন টমাস মুলার। তখন পর্যন্ত সব স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। এক গোলে পিছিয়ে থেকে ব্রাজিলের বড় জয় তুলে নেওয়ার ইতিহাস আছে ভুরি ভুরি। কিন্তু সেদিন সব ইতিহাস যেন মাটির নিচে চাপা দিয়ে দেয় জার্মানি।
২৩ থেকে ২৯-ব্রাজিলকে ভয়াবহ ৬ মিনিট উপহার দেয় জার্মানি। এই সময়ের মধ্যে ব্রাজিল হজম করে চার গোল অর্থাৎ ৩০ মিনিট পেরোনোর আগেই ৫-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে সেলেসাওরা।
ঘরের মাঠে আধ ঘণ্টাতেই এমন বিপর্যয়। ব্রাজিলের ১১ ফুটবলার যেন নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাদের দেখে মনে হয়েছে, হাত-পা চলছে না। তখনই চোখ ছলছল করতে থাকে ডেভিড লুইজ, মার্সেলো, মাইকন, অস্কারদের।
সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্রাজিল। ৬৯ এবং ৭৯ মিনিটে আরও দুই গোল করেন জার্মানির আন্দ্রে শুরলে। ৯০ মিনিট পর্যন্ত ৭-০ গোলে এগিয়ে ছিল জার্মানির। নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে ব্রাজিলের হয়ে একটি গোল করেন অস্কার।
অনেকেই মনে করেন, সেদিন হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারতো। ব্রাজিলের মতো দলের এমন দুর্দশা দেখে দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানি কিছুটা সহানুভূতি দেখিয়েছিল। ম্যাচের পর জার্মান ডিফেন্ডার ম্যাট হুমেলস তো বলেছিলেনও, ‘আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলকে অসম্মান না করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
সম্মানহানি যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। সেই যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ব্রাজিল। ৭-১ গোলে ওই হারের পরই যেন ব্রাজিলের ফুটবলে নেমে এসেছে অমানিশা। এখন পর্যন্ত নিজেদের সেই সোনালি দিনে ফিরতে পারেনি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
