পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি: চিদাম্বরম


ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করার আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ থাকা উচিত। এখন পর্যন্ত এমন কিছু উপস্থাপিত হয়নি যা নিশ্চিতভাবে পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসীরা এসেছে বলে প্রমাণ করে।”
চিদাম্বরমের এই মন্তব্য ইতোমধ্যেই ভারতের রাজনীতিতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তার মতে, হামলায় দেশীয় সন্ত্রাসীরাই জড়িত থাকতে পারে। অন্যদিকে তার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। সোমবার (২৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের পার্লামেন্টে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে বিতর্কের আগে পেহেলগাম হামলা ঘিরে কংগ্রেস নেতা পি. চিদাম্বরমের এক মন্তব্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামলায় দেশীয় সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকতে পারে এবং পাকিস্তান থেকে হামলাকারীরা এসেছিল— এমন কোনও প্রমাণ নেই।
সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম বলেন, “(মোদি) সরকার বলছে না যে এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) কী তদন্ত করেছে। তারা কি সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করেছে? তারা কোথা থেকে এসেছে? যতটুকু জানা যাচ্ছে, তারা দেশীয় সন্ত্রাসীও হতে পারে। আপনারা কেন ধরে নিচ্ছেন তারা পাকিস্তান থেকে এসেছে? (তাদের পাকিস্তান থেকে আসার) কোনও প্রমাণ নেই।”
সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, পেহেলগামে ২৬ জন নিরীহ মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হামলাকারীরা পাকিস্তানের নাগরিক।
চিদাম্বরম আরও বলেন, অপারেশন সিন্দুর চলাকালে ভারতের ক্ষয়ক্ষতি সরকার গোপন করছে। তার ভাষায়, “আমি কলামে লিখেছি, যেকোনও যুদ্ধে উভয় পক্ষেই ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভারতও নিশ্চয়ই কিছু হারিয়েছে। সেটি খোলাখুলিভাবে বলুন।”
তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উইনস্টন চার্চিল প্রায় প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশ করতেন। তাই যদি কোনও ক্ষতি হয়ে থাকে, সেটা স্বীকার করাই উচিত। যুদ্ধ মানেই ক্ষয়ক্ষতি, এটা স্বাভাবিক। আমি মনে করি, সরকার অপারেশন সিন্দুর ঘিরে একটি মোটা পর্দা টানতে চাচ্ছে— কিন্তু সেটা চলবে না।”
চিদাম্বরম প্রশ্ন তোলেন, সরকার সংসদে এই ইস্যুতে আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে কেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কেন অপারেশন সিন্দুর নিয়ে কথা বলছেন না? সংসদ তো গণতন্ত্রের মন্দির— সেখানে বিতর্ক চলুক না কেন? প্রধানমন্ত্রী মোদি তো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন, নানা জনসভায়ও বক্তব্য রেখেছেন।”
তিনি আরও বলেন, সরকার হয়তো অস্বস্তিতে পড়তে পারে যদি প্রশ্ন ওঠে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কীভাবে এলো। প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা বলেন, “সত্যি কথা বলতে কী, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা তো ভারত সরকার দেয়নি, ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছিলেন।”
চিদাম্বরমের এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে শাসক দল বিজেপি।
সিনিয়র বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেছেন, “ইউপিএ আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কুখ্যাত ‘গেরুয়া সন্ত্রাস’ তত্ত্বের মূল প্রবক্তা পি চিদাম্বরম আবারও নিজেকে গৌরবের সাথে আড়াল করছেন। আবারও কংগ্রেস পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দিতে উঠেপড়ে লেগেছে— এবার পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর। কেন আমাদের বাহিনী যখনই পাকিস্তান-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হয়, তখনই কংগ্রেস নেতারা ভারতের বিরোধীদের চেয়ে ইসলামাবাদের আইনজীবীদের মতো বেশি শোনায়?”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও অস্পষ্টতা থাকা উচিত নয়। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এমনটা কখনোই হয় না। তারা শত্রুকে রক্ষা করার জন্য সর্বদা পেছনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।”
