সকালে ওঠার পর নাকি নাশতার পর কখন ব্রাশ সবচেয়ে উপকারী


সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনেকের মুখে এক ধরনের অস্বস্তি বা দুর্গন্ধ টের পাওয়া যায়। এর মূল কারণ দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া। রাতে ঘুমের সময় মুখে লালার প্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে দাঁতের ওপরে প্লাক তৈরি করে। এই প্লাক শুধু মুখে দুর্গন্ধই সৃষ্টি করে না, বরং দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই দাঁতের সঠিক যত্নে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করা উচিত—নাকি নাশতার পর ব্রাশ করা ভালো, এ নিয়েই অনেকের মনে দ্বিধা থেকে যায়।
নাশতার আগে ব্রাশের উপকারিতা
অধিকাংশ ডেন্টিস্টের মতে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই দাঁত ব্রাশ করা সবচেয়ে কার্যকর। কারণ, ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করা জরুরি। এ সময় ব্রাশ করলে শুধু মুখের দুর্গন্ধই দূর হয় না, বরং ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দাঁতের এনামেলের ওপরে একটি সুরক্ষাবলয় তৈরি করে।
এই সুরক্ষাবলয় নাশতার সময় খাওয়া টক জাতীয় ফল, কফি কিংবা অন্য কোনো অ্যাসিডিক খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দাঁতকে রক্ষা করে। তাছাড়া ব্রাশ করার ফলে লালা উৎপাদনও বেড়ে যায়। লালা মুখের জীবাণু দূর করতে সহায়তা করে এবং খাবার হজমে ভূমিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রাশ করার পর অন্তত ৫ মিনিট পর্যন্ত লালার পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা দাঁতের জন্য উপকারী।
নাশতার পরে ব্রাশের ঝুঁকি
অনেকেরই অভ্যাস হলো খাবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা। ডেন্টিস্টরা বলছেন, এ অভ্যাস সম্পূর্ণ ভুল নয়, তবে কিছু সতর্কতা জরুরি। বিশেষ করে টোস্ট, কমলালেবু, কফি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁতের এনামেল সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। সেই সময় যদি সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ করা হয়, তবে খাবারের অ্যাসিড দাঁতের ওপরে ছড়িয়ে পড়ে এবং এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এ কারণে আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ হলো নাশতার পর ব্রাশ করতে চাইলে অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন বা চিনি-মুক্ত চুইংগাম চিবাতে পারেন। এতে মুখের স্বাদ সতেজ থাকবে এবং দাঁতও কিছুটা সুরক্ষিত থাকবে।
দাঁত ব্রাশ করার সঠিক নিয়ম
- শুধু সঠিক সময়ে ব্রাশ করাই নয়, সঠিকভাবে ব্রাশ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্রাশ করার আগে ব্রাশটি হালকা পানিতে ভিজিয়ে নিন।
- মটরদানা পরিমাণ ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
- ব্রাশ দাঁতের রেখায় সামান্য কোণাকুণি ধরে আলতোভাবে ঘষুন।
- কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে সামনের দাঁত, পেছনের দাঁত ও চিবোনোর জায়গাগুলো পরিষ্কার করুন।
- জিহ্বাও পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
- শেষে মুখ ভালোভাবে কুলি করুন।
সকালের ঘুম ভাঙার পর দাঁত ব্রাশ করাই দাঁতের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এতে দাঁত সুরক্ষিত থাকে, মুখ সতেজ হয় এবং দিন শুরু হয় স্বাস্থ্যকর অনুভূতিতে। তবে যদি কেউ নাশতার পরে ব্রাশ করতে চান, তাহলে অন্তত আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করাই সঠিক উপায়। মনে রাখতে হবে সকালে হোক বা রাতে, একেবারে ব্রাশ না করাটাই দাঁতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর অভ্যাস।
দৈএনকে/ জে .আ
