ফ্রেমে ফ্রেমে গল্প খুঁজতে দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ে নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাব


কখনো ভোরের শিশিরভেজা ঘাসে, কখনো বিকেলের লালচে আকাশের নিচে নোবিপ্রবির সবুজ প্রান্তরে ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়ায় একদল শিক্ষার্থী। তারা খুঁজে ফেরে এমন সব মুহূর্ত, যা হয়তো সাধারণ মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়, কিন্তু লেন্সের ভেতর দিয়ে হয়ে ওঠে অসাধারণ। নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাবের সদস্যদের ফ্রেমে ধরা পড়ে লাল-সাদা বাসের রঙিন ছোঁয়া, কিংবা হঠাৎ নেমে আসা বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া প্রাঙ্গণ যা ছবির মাধ্যমে পায় নতুন প্রাণ।
শুরুটা ২০১৭ সালে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পর কয়েকজন আলোকচিত্রপ্রেমী শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠে নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাব। প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলোকচিত্রচর্চায় যুক্ত করা এবং ক্যামেরা হাতে মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করার কৌশল শেখানো।
প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়ের মধ্যেই ক্লাবটি ক্যাম্পাসের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশে পরিচিতি লাভ করে। ‘বাংলা দর্পণ’ নামের জাতীয় পর্যায়ের আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী আয়োজন, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, কর্মশালা ও ফটোওয়াকের মাধ্যমে সংস্কৃতি প্রচার সবকিছুতেই তারা রেখেছে সক্রিয় পদচারণা।
ক্লাবের সবচেয়ে বড় আয়োজন বার্ষিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘বাংলা দর্পণ’। এখানে শুধু নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরাই নয়, বাইরের ফটোগ্রাফাররাও অংশ নেন। প্রকৃতি, মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতির নানারঙা ছবি সাজানো থাকে মুক্ত আকাশের নিচে, যেখানে দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে ছবির গল্পে হারিয়ে যান। ‘বাংলা দর্পণ’ সিজন-৬ প্রদর্শনীতে ১৭০ জন ফটোগ্রাফারের পাঠানো ৫১০টিরও বেশি ছবির মধ্যে বাছাই করা সেরা ৮০টি ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনী শেষে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার, সনদ ও উপহার।
বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবসেও থাকে বিশেষ আয়োজন। ওয়ার্কশপে শেখানো হয় ফ্রেমিং, কম্পোজিশন, বেসিক এডিটিংসহ আলোকচিত্রের নানাবিধ কৌশল ও সৃজনশীল দিক।
নিয়মিত থিমভিত্তিক প্রতিযোগিতা ও ফটোওয়াকের মাধ্যমে ক্লাবের সদস্যরা শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, জেলার বিভিন্ন স্থানেও ঘুরে ছবি তোলেন। কখনো কখনো সামাজিক সচেতনতা তৈরির জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ ফটোশুট। ফটোশুটের অর্থ দিয়ে বন্যার্ত বা দুযোর্গ পীড়িত মানুষদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা হয়।
চলতি মাসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্লাবের অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী ‘দৃষ্টিকোণ’। ক্যাম্পাস ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে জমা হওয়া ছবিগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত সেরা কাজগুলো প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
ফটোগ্রাফি ক্লাবের বর্তমান সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, “নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাবের ঐতিহ্য ধরে রেখে আমরা নতুন কিছু উদ্যোগ নিচ্ছি। নিয়মিত কর্মশালা, ফটোওয়াক ও আড্ডার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আলোকচিত্রে আগ্রহী করে তুলছি। আমাদের লক্ষ্য শুধু ছবি তোলা নয়, ছবি দিয়ে গল্প বলা।”
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘আমার ছবি, আমার ভাষা’ প্রতিযোগিতা, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন ক্লাবের কার্যক্রমকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাব অসংখ্য তরুণকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যামেরা হাতে পথচলার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ এবং দেশের বাইরেও নোবিপ্রবির নাম ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে এই আলোকচিত্রী পরিবার।
নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাবের সদস্যদের বিশ্বাস ছবি শুধু সময়ের একটি মুহূর্ত ধরে রাখে না, এটি গল্প বলে। আগামী দিনে তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে উন্মুখ।
