চাকরি হারানোর আতঙ্কে রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা


রাজস্ব খাতের শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন পেশাগত অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছেন। আগে যারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ছিলেন, এখন নানা কারণে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। মতের ভিন্নতা দেখা দিলেই অনেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে, কেউ কেউ পড়ছেন প্রভাবশালীদের চাপে হয়রানির শিকার। আবার অনেকে হঠাৎ করেই বদলি হচ্ছেন দূরবর্তী ও গুরুত্বহীন কর্মস্থলে। এমনকি কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত শুরু হওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে পেশাজীবীদের মধ্যে।
এনবিআর ভবনের প্রতিটি তলায় ভয় ও আতঙ্কে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। অনেকেই বলছেন, ‘চাকরি থাকবে তো!’—এই দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এনবিআরের আন্দোলনে যুক্ত থাকা বা সমর্থন দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে, যদিও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ নেই। ক্ষমা চাওয়ার চাপও দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এর আগে এনবিআরের চারজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, যাদের মধ্যে তিনজন সদস্য এবং একজন কমিশনার। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এখন বদলি বা পদোন্নতির জন্য তদবির-লবিং বেড়েছে, আর যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে উঠেছে ‘চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক’ হওয়া।
সূত্র মতে, অন্তত ৩৫০ জন কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থাকা ব্যক্তিও রয়েছেন। এই প্রতিবেদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৫০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ও সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন বন্ধ হয়েছিল। তখন প্রতিশ্রুতি ছিল প্রতিহিংসামূলক কিছু হবে না। বাস্তবতা উল্টো। এভাবে চললে রাজস্ব খাতেই অচলাবস্থা দেখা দেবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে এনবিআর কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, এমন অঙ্গীকার সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আসা দরকার। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আগে স্বচ্ছতা থাকা উচিত। এটি এখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক সংকট।’
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘আক্রোশ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। অভিযোগ থাকলে প্রমাণ-ভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনার পথ বন্ধ করা যাবে না।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার ও এনবিআর দু’পক্ষই বাড়াবাড়ি করেছে। সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুদককে দিয়ে টার্গেট করে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, সেটি অযৌক্তিক।’
এদিকে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। যারা দায়িত্বশীল আচরণ করছেন, তাদের বিপদ নেই। কেউ কেউ হয়তো সীমা লঙ্ঘন করেছেন, তাদের আলাদাভাবে দেখা হবে।’
উল্লেখ্য, গত মে মাসে এনবিআরকে দুই ভাগ করে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ (রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি) গঠনের অধ্যাদেশ জারি হয়। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। সর্বশেষ ২১ ও ২২ জুন কর্মীরা সম্পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেন।
