দিল্লির অনুমতি না পেয়ে অনিশ্চিত ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফর


আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসার কথা থাকলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় এই সিরিজটি নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দিল্লির কয়েকটি শীর্ষ সরকারি সূত্র বিগত দিনে বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আগস্টের ১৭ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ভারতের সঙ্গে। তবে এখন পর্যন্ত সরকার থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়া গেলে সিরিজের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমছে।
আগামী মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় সিরিজটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। দিল্লির শীর্ষস্থানীয় সরকারি সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে শীতল কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের নেতাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব বিদ্যমান। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার মনে করছে, ক্রিকেট টিমের সফর কোনও ইতিবাচক সংকেত বহন করবে না।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিসিসিআই ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সিরিজ ‘রিশিডিউল’ করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। বিসিবির কর্মকর্তারাও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমানে ভারতের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায়, এই সফর বাতিল না করে ২০২৬ সালের আইপিএলের পর নেওয়ার প্রস্তাব বিসিসিআই বিসিবিকে করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তখন বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকবে, যা ভারতের জন্য সফর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভারতের সরকারের মূল্যায়ন অনুযায়ী বাংলাদেশে ক্রিকেট সফরের জন্য পরিবেশ ‘অনুকূল নয়’, এবং বিসিসিআইও এই অবস্থাকে মেনে নিয়েছে।
অপরদিকে, আগামী সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে, যেখানে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ সব দল অংশ নেবে। যদিও টুর্নামেন্টের নির্দিষ্ট সূচি এখনও প্রকাশ পায়নি, সম্ভাবনা রয়েছে এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘নিউট্রাল ভেন্যুতে’ আয়োজন করা হতে পারে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তার মতে, “আইসিসি বা এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে আমরা পাকিস্তানের বিপরীতে খেলি, কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব স্পষ্ট।”
পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণ মূল। তবে যদি বাংলাদেশকে নিয়েও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ স্থগিত বা বাতিল হয়, তাহলে সেটি হবে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে রাজনীতির প্রথম বড় ছায়া।
গত বছর আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারত সফরে আসার সময়ও চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও সফর বাতিল হয়নি। যদিও তখন বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বয়কট বাংলাদেশ ক্রিকেট’ আন্দোলন চরমে ছিল। নিরাপত্তার কারণে ম্যাচগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল।
তবে ওই সফর বাতিল না হওয়ার বড় কারণ ছিল ভারত ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রতিযোগিতায় থাকতে চাওয়া। আইসিসির সূচিতে থাকা টেস্ট ম্যাচ না খেললে ভারত ফাইনাল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা ছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ও সাম্প্রতিক দুর্গা মণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে। এ কারণে ভারত সরকার মনে করছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করলে তা ভারতীয় জনগণের কাছে ‘ভুল বার্তা’ দেবে।
অগাস্টের সফর যদি স্থগিত হয়, তাহলে ভারতের ক্রিকেটে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ ওই সফরে টেস্ট ম্যাচ নেই, আর ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পয়েন্ট ডাব্লিউটিসির র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলবে না।
ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিসিসিআই। তারা মনে করে, সাময়িক রাজনৈতিক উত্তেজনা কাটিয়ে ওঠার পর পুনরায় সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
বিসিসিআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়, আমাদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে আস্থা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সিরিজ আয়োজন সম্ভব।”
ভারতীয় বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্লা দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন, যিনি কংগ্রেস এমপি হলেও বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন। তার নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
