শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

চট্রগ্রামে সিটি মেয়র শাহাদাতের প্রথম বাজেট ঘোষণা

চট্রগ্রামে সিটি মেয়র শাহাদাতের প্রথম বাজেট ঘোষণা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য দুই হাজার ১৪৫ কোটি ৪২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সোমবার (২৩ জুন) নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে নতুন বাজেট ঘোষণা করেন চসিক মেয়র ডা. মো. শাহাদাত হোসেন। এর পাশাপাশি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের ১ হাজার ২২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন তিনি। মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর এটি তার প্রথম বাজেট।

অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ত্রাণ, উন্নয়ন অনুদান ও অন্যান্য উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ১,০৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা; ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন, স্থায়ী সম্পদ, দেনা পরিশোধসহ বিভিন্ন খাতে মোট ২,১০৬ কোটি টাকা; বাজেটে কোন ঘাটতি নেই, বরং ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বাজেট উপস্থাপনকালে মেয়র ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চসিককে ঋণমুক্ত, স্বনির্ভর ও টেকসই প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি।’

তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের সময় চসিকের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ৫৯৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে শুধুমাত্র ডিএসএল বাবদ বকেয়া ছিল ১৪৬ কোটি টাকা। ধারাবাহিক দেনা পরিশোধের ফলে বর্তমানে মোট দেনা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি টাকায়।

মেয়র আরও উল্লেখ করেন, এবার প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে পৌরকর বাবদ ১৪০ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হয়েছে, যা চসিকের রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

মেয়র বলেন, 'উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দ খাতে ৬৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বিশ্ব ব্যাংকের কোভিড-১৯ সহায়তা বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। আয়কর বাবদ ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ভ্যাট বাবদ ৩৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্যত তহবিল বাবদ যথাক্রমে ১৯ কোটি ১৮ লাখ ও ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতি মাসে ৪০০ জনকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আনুতোষিক প্রদান অব্যাহত রয়েছে।'

ডা. মো. শাহাদাত বলেন, 'উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দ খাতে ৬৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বিশ্ব ব্যাংকের কোভিড-১৯ সহায়তা বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। আয়কর বাবদ ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ভ্যাট বাবদ ৩৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্যত তহবিল বাবদ যথাক্রমে ১৯ কোটি ১৮ লাখ ও ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতি মাসে ৪০০ জনকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আনুতোষিক প্রদান অব্যাহত রয়েছে।'

তিনি বলেন, ‘জাইকার সহায়তায় আধুনিক বাজেট ও হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি, আগামী অর্থবছরের মধ্যে পুরো হিসাব বিভাগ অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে।’

চসিকের আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে চসিকের রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে, ফলে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। বর্তমানে চসিক এলাকায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩টি হোল্ডিং এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪টি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। কর ও লাইসেন্স ব্যবস্থাপনা ইতোমধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনছে।

তিনি বলেন, ‘চসিক নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৮টি রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে গণশুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা কর নির্ধারণ ও আপিল ব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক ও সেবামুখী করেছে।’

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে আধুনিকায়ন আনার বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘চসিক এলাকার ১৯টি খাল থেকে ৪১ লাখ ঘনফুট মাটি ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৪৮টি প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে আরও ২০০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। মশক নিধনে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

তিনি বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির পরও নগরের জিইসি, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি, যা ড্রেনেজ ব্যবস্থায় গৃহীত কার্যকর উদ্যোগের ফল। জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, যার আওতায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে।’

মেয়র বলেন, ‘আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য দক্ষিণ পাহাড়তলীতে ১০ একর জমি কেনা হয়েছে এবং একই সঙ্গে কুলগাঁও এলাকায় বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। চসিক প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় চসিকের অধীনে আনা হয়েছে এবং বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চসিকের প্রসারমান কার্যক্রমের জন্য পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো অনুমোদনের আবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ‘সিটিজেন চার্টার’ প্রণয়ন করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে নগরবাসী সেবার ধরন, সময়সীমা ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পান। এছাড়া চাকরি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চসিক নিজস্ব জব পোর্টাল চালু করেছে। প্রথম ধাপে ২২টি পদে ১২৩ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।’

চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সঞ্চালনায় বাজেট অধিবেশনে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরীসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ