শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশ চোরাই পথে চামড়া পাচারে সীমান্তে কঠোর নজরদারি 

ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশ চোরাই পথে চামড়া পাচারে সীমান্তে কঠোর নজরদারি 
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাতক্ষীরার ২৭২ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

 এরমধ্যে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এবং ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন-এর পাশাপাশি রয়েছে রিভারাইন বর্ডার গার্ড। 

প্রতিবেশী দেশ থেকে যাতে কোনোভাবে চোরাই পথে গরু প্রবেশ করতে না পারে এবং বাংলাদেশ থেকে যাতে কোনোভাবে চোরাই পথে চামড়া পাচার হতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। একইসাথে মাদক পাচার ও পুশইন প্রতিরোধে সীমান্তে সার্বক্ষণিক সীমান্তে দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি। 

এদিকে, ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় জমে উঠেছে সাতক্ষীরার পশুর হাট ও খামারগুলো। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি গরুর গোসল, খাবার তৈরি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় খামারিরা পার করছে। এবার চাহিদার চেয়ে পশুর সংখ্যা বেশি থাকায় প্রত্যাশিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। সেই সঙ্গে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশের শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। বিজিবির পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সীমান্ত পাহারায় রয়েছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহায় সাতক্ষীরায় কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ৩১৮টি। বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬০৬টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে ৪৯ হাজার ১৯৯টি গরু, ১ হাজার ১৮২টি মহিষ, ৪৪ হাজার ৫৪টি ছাগল, ৬ হাজার ১৫৬টি ভেড়া এবং অন্যান্য ১০টি পশু।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের খামারি আব্দুল আজিজ বলেন, মাত্র ছয় মাস আগে খামার শুরু করেছি। এখন আমার খামারে ১০টি গরু রয়েছে। নিজ বাড়িতে লাগানো ঘাস খাইয়ে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করছি। যদি, ভারত থেকে গরু না আসে, তাহলে আমরা প্রান্তিক খামারিরাও ভালো লাভ করতে পারব।

খামারি ইনজামুল হক বলেন, আমার খামারে প্রতিদিন সকাল বেলা গরুর গোসল করিয়ে পরিচর্যা করি। এরপর খাবার দেয়া হয় পর্যায়ক্রমে। সব সময় স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখি।

 খামারি হাফিজুল ইসলাম বলেন, এবার খাবারের দাম অনেক বেশি, কিন্তু বাজারে গরুর দাম কম। লাখ টাকার ওপরে গরু বিক্রি হচ্ছে না। লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। বড় গরুগুলো বিক্রি হলে হয়তো কিছু লাভ হতে পারে।

এইবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে পশুর দাম কিছুটা সহনীয় থাকবে বলে ধারণা খামারিদের।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডাঃ বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, চাহিদার তুলনায় এবার প্রায় ১৫ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তবে আতঙ্কের কিছু নেয়। ভারতীয় গরু যাতে না আসে, সেজন্য সরকার কড়া অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

 প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ বিশ্বাস আরও বলেন, জেলার ১২ হাজার ৮৯৪টি খামারে পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার পশুর সংখ্যা বেড়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশ। চোরাই পথে সীমিতসংখ্যক গরু এলেও তাতে প্রান্তিক খামারিদের উপর তেমন প্রভাব পরবে না।

এদিকে, সাতক্ষীরার বাজারে এখন পশু খাদ্য ও পরিচর্যা খরচ বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বাজারে ভারতীয় গরু না আসে, তাহলে লোকসানের আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমবে।

সাতক্ষীরায় ঈদে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৬। 

এ বিষয়ে র‌্যাব-৬, সিপিসি-১, সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোঃ এহতেশামুল হক খান বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার নাশকতা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সাতক্ষীরার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। 

পাশাপাশি আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, যেন তারা নিজেরাও সচেতন থাকেন এবং যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে আমাদেরকে দ্রুত অবহিত করেন। র‌্যাব সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। ঈদকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতা, মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যদের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও টহল টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।       


এসএম শহীদুল ইসলাম, প্রতিনিধি 
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ