রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
Natun Kagoj

নাগেশ্বরীতে পাউবোর সংস্কার প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নাগেশ্বরীতে পাউবোর সংস্কার প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি সংস্কার প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ২৭ লাখ টাকার বরাদ্দে পুরানো অফিস ভবন সংস্কারের কথা থাকলেও, সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি নতুন টিনশেড ঘর—যার আয়তন মাত্র ৩০ বর্গফুট। 

সরকারি নথিতে প্রকল্পের নাম ‘অফিস ভবন সংস্কার কাজ সম্পন্ন’ উল্লেখ থাকলেও, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পুরানো ভবনটি আগের মতোই ধসে পড়ার অবস্থায় পড়ে আছে। দেয়ালে ফাটল, ছাদে চিড় ও অযত্নে পরিত্যক্ত ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী। তার পাশেই কাঠ ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি একটি ছোট টিনশেড ঘর এখন পাউবোর নতুন অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

স্থানীয় ঠিকাদারদের দাবি, এ ধরনের একটি ঘর নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৯ লাখ টাকার বেশি খরচ হয় না। কিন্তু সরকারি কাগজে বিল দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ টাকা—যা সরাসরি সরকারি অর্থ আত্মসাতের ইঙ্গিত দেয়।

২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ‘দুধকুমর প্রকল্পের আওতায় অফিস ভবন সংস্কার’ শিরোনামে এই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তবে বাস্তবে কোনো সংস্কার না হয়ে নতুন নির্মাণের কাজই সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ব্রাদার্স, আলম নগর-কে। কিন্তু বাস্তবে কাজটি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বেলাল কনস্ট্রাকশন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক বেলাল হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না।

নাগেশ্বরী পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্না হক সাংবাদিকদের  বলেন, পুরানো ভবনটি নষ্ট ছিল, তাই নতুন ঘর করা হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায় সংস্কারের অর্থেই টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিভাগীয় প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজটি করা হয়েছে।

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সমন্বয় করে কাজ করেছি। এতে নীতিগত কোনো সমস্যা নেই।

রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মোহা. সরফরাজ বান্দা বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। কীভাবে অনুমোদন হয়েছে, তা জানি না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে এক বরাদ্দের অর্থ দিয়ে অন্য খাতের কাজ করা যেতে পারে। এখানে কীভাবে হয়েছে, সেটি যাচাই না করে বলা যাবে না।

দুধকুমর প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক ও বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্বাঞ্চল) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের  বলেন, এ বিষয়ে আমার এখন কিছু মনে নেই। কয়েকদিন পরে জানাতে পারব।” তবে প্রকৌশলী মুন্না হক দাবি করেছেন, তাঁর (মাহবুবুর রহমানের) নির্দেশনাতেই সংস্কারের অর্থ ব্যবহার করে নতুন টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। 

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এই ধরনের অনিয়ম শুধু সরকারি অর্থের অপচয় নয়, এটি প্রশাসনিক জবাবদিহিরও বড় ব্যর্থতা। দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।


দৈএনকে/সা.শা/কুড়িগ্রাম
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন