অপরাধীর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া তাওবা: আল্লাহর ক্ষমার এক আশ্চর্য ঘটনা

মানুষ যত বড় গোনাহই করুক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা কখনোই তার জন্য বন্ধ হয় না। তিনি সর্বদা ক্ষমাশীল, দয়ালু এবং বান্দার অনুতাপ গ্রহণকারী।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন —
“হে আমার বান্দাগণ! তোমরা নিজের প্রতি যতো অন্যায় করো না কেন, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আয-যুমার: ৫৩)
এই আয়াত মানুষকে আশার আলো দেখায়, যে কোনো পাপের পরও আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানায়।
তাওবা মানে কেবল অতীতের ভুল থেকে ফিরে আসা নয়; বরং এটি এক নতুন জীবনের সূচনা—যেখানে আত্মা শুদ্ধ হয়, হৃদয় প্রশান্ত হয়, আর জীবনে ফিরে আসে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলার প্রেরণা।
তাই, যত ভুলই হোক না কেন, কখনো হতাশ হওয়া ঠিক নয়।
আল্লাহর দরজা সবসময় খোলা থাকে তাদের জন্য, যারা আন্তরিকভাবে ফিরে আসে তাঁর দিকে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক চমৎকার ঘটনার মাধ্যমে এ কথাই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন—
আবু সাইদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বনি ইসরাইলে এমন এক ব্যক্তি ছিলো যে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছিলো। তারপর সে (অনুশোচনা করত তাওবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে) বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞেস করলো, আমার তওবা কবুল হওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি?
তখন পাদরী বললো, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করলো। এরপর সে (লোকদের নিকট) জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
তখন এক ব্যক্তি তাকে বললো, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হলো, পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল।
মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতাগণ তার রূহ নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেন।
আল্লাহ তাআলা সম্মুখের ভূমিকে (যেখানে সে তওবার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল) আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে নির্দেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও।
তারপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে আদেশ দিলেন, তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ করো। পরিমাপ করা হলে দেখা গেলো, যে জনপদের দিকে সে যাচ্ছিলো সেদিকে সে এক বিঘত বেশি অগ্রসর হয়েছিলো। কাজেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৭০)
হাদিসের শিক্ষা
আল্লাহর রহমত ক্ষমার বাহানা খুঁজে।
যেমনটা অনেক হাদিসে এসেছে। অতএব বান্দা যখন ক্ষমা লাভের পথ খোঁজা শুরু করে, আল্লাহ এ পথকে তার জন্য সহজ করে দেন। এজন্য আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও রহমত অর্জনের চেষ্টা করা সকল মুমিনের অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য। কারণ-
আল্লাহর রহমত অসীম — যত বড় গোনাহই হোক, আন্তরিক তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন।
তাওবা কখনো দেরি করা উচিত নয় — মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাওবার সুযোগ থাকে, তবে বিলম্ব বিপজ্জনক।
সৎ পরিবেশের গুরুত্ব — গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে ভালো পরিবেশ ও সৎ সমাজের দিকে অগ্রসর হওয়া জরুরি।
নিয়্যাতের মর্যাদা — মানুষ তার কাজের ফলাফল নয়, নিয়্যাতের ওপরও পুরস্কৃত হয়।
আল্লাহ বান্দার জন্য সহজ করেন — যখন বান্দা তাওবার পথে এক কদম বাড়ায়, আল্লাহ তাঁর দিকে অনেক ধাপ অগ্রসর হন।
রহমতের ফেরেশতাগণ গুনাহগার তাওবাকারীকেও সম্মান করেন — আল্লাহর দয়া তার ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়।
তাওবা শুধু মুখের কথা নয় — তাওবা মানে ভুল জীবন ছেড়ে সত্য পথে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া।
যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহও তার দিকে রহমতের বাহু মেলে ধরেন।