নবীজির বর্ণনায় আদর্শ স্বামীর পাঁচ গুণ


বৈধ ভালোবাসায় সিক্ত একমাত্র মাধ্যম বিয়ে। এর মাধ্যমে মাধ্যমে দুজন মানুষ, দুটি পরিবার একসঙ্গে মিলে যায়। এই সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আরও কিছু বিষয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনের ধৈর্য্য, পারস্পরিক বোঝাপোড়ার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন সুখের হয়ে থাকে।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে স্বামীকে উত্তম স্বামী হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি। (তিরমিজি ৩৮৯৫)
উত্তম স্বামী হওয়ার ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কী কী গুণাবলি ছিল তা হাদিসের আলোকে এখানে তুলে ধরা হলো।
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা
বাহির থেকে এসে স্ত্রীর কাজ দেখে খোটা না দিয়ে তাকে সহযোগিতা করলে পরস্পর ভালোবাসা বাড়বে। কেননা নবীজি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-কে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন,
তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজে যেতেন’। (বুখারি ৬০৩৯)
স্ত্রীর সঙ্গে কোমল আচরণ করা
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সঙ্গে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সঙ্গে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের সঙ্গে ভালোবাসা ও বদান্যতার আচরণ করতেন।
ইবনে সাদ (রহ.) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তাকে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে একান্তে অবস্থানকালীন সময়ের স্বভাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বলেন,
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে কোমল ব্যক্তি, সদা সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল, তিনি কখনও তার সঙ্গীদের সামনে পা প্রসারিত করে বসতেন না। (তিরমিজি)
স্ত্রীর ওপর অযথা রাগ না করা
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও। আমি বললাম, কীভাবে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের রবের কসম! এ কথা শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, ইয়া রসুলাল্লাহ, সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (বুখারি: ৫২২৮)
এ থেকে বোঝা যায় তিনি স্ত্রীদের পর্যবেক্ষণ করতেন এবং কখনো তাদের রাগের ওপর পালটা প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না।
সন্তানের যত্ন নেয়া
আপনি তখনই একজন প্রিয় স্বামী হবেন যখন আপনার স্ত্রীকে সন্তানদের লালন পালনের কাজে সহযোগিতা করবেন। আপনি সারা রাত নাক ডেকে ঘুমাবেন আর আপনার স্ত্রী একটু পর পর বাচ্চার ভেজা কাপড় পাল্টাবে, এভাবে হলে আপনার স্ত্রী আপনাকে স্বার্থপর ভাববেন।
আপনিও যতটুকু পারেন তার কাজে সহযোগিতা করুন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদেরকে খুব ভালোবাসতেন। বুখারি ও মুসলিমে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আমি নামাজ শুরু করে লম্বা করতে চাই, তবে শিশুর কান্না শুনে হালকা করে শেষ করি, কারণ আমি মায়ের কষ্টের তীব্রতা জানি।
স্ত্রীকে পর্দায় রাখা
পর্দা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ এবং তার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা। কেননা তাদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে। তাই একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো স্ত্রীকে পর্দায় রাখা।
মহান আল্লাহ নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সুরা আহজাব: ৩৩)
দৈএনকে/জে, আ
